ভারতীয় মহিষের মাংস ভয় দেখাচ্ছে খামারিদের
ঢাকা: কোরবানির ঈদ উপলক্ষে ভারত থেকে ‘বিট খাটালের’ মাধ্যমে গরু আনার অনুমতি দিচ্ছে না সরকার। এতে দেশের খামারিরা খুশি হলেও পরিপূর্ণ খুশি হতে পারছেন না। কারণ রাজস্ব কম দিতে হয় বলে ভারত থেকে ব্যাপকভাবে আমদানি হচ্ছে মহিষের হিমায়িত মাংস।
জানা গেছে, মাত্র ১১ শতাংশ ডিউটি ফি দিয়ে ভারত থেকে মহিষের হিমায়িত মাংস আনা যায়। কিন্তু অন্য যে কোনো দেশ থেকে তা আনতে ডিউটি ফি দিতে হয় ৬০ শতাংশ।
করোনা সংকটে দেশে গরুর চাহিদা নেই বললেই চলে। কারণ বড় ধরনের সব সামাজিক অনুষ্ঠান বন্ধ। ফলে খামারিরা বাড়তি গরু নিয়ে কিছুটা বিপাকে আছেন। কোরবানিতে সেই গরুগুলো বিক্রির আশা থাকলেও ভারতীয় মাংস আমদানির কারণে উপযুক্ত দাম না পাওয়ার আশঙ্কায় আছেন তারা।
খামারিরা জানান, করোনা ভাইরাসের কারণে গরুর চাহিদা কমে গেছে। কোনো অনুষ্ঠান নেই। রেস্টুরেন্টে মানুষ খেতেও যায় না। স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় চাহিদা কমেছে প্রায় ৭৫ শতাংশ। অন্যান্য বছর রোজায় ১৫ লাখ গরুর চাহিদা থাকলেও এবার ছিল মাত্র তিন লাখ।
জানা গেছে, গত কোরবানির ঈদে মোট ৪৫ লাখ গরু কোরবানির জন্য প্রস্তুত ছিল। কিন্তু গরু বিক্রি হয়েছে ৩৭ লাখ। এছাড়া এবার রোজায় ১২ লাখ গরু বিক্রি হয়নি। কোরবানির জন্য গরু প্রস্তুত করা হয়েছে প্রায় ৪৫ লাখ। সব মিলিয়ে এখন গরু আছে ৬৫ লাখ। এর অর্ধেক গরু এবার বিক্রি হবে কি না তা নিয়ে আছে সংশয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কয়েক মাসের ব্যবধানে ভারতের মহিষের হিমায়িত মাংস, কলিজা ও ফুসফুসের আমদানি বেড়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়েই প্রতি মাসে গড়ে ৫-৬ লাখ কেজি মহিষের মাংস প্রবেশ করছে। কোনো ধরনের উন্নত পরীক্ষা ছাড়াই এসব মাংস প্রবেশ করেছে দেশে। আর তা বিক্রি করা হচ্ছে গরুর মাংস হিসেবেই। ফলে স্বাস্থ্য ঝুঁকি যেমন বাড়ছে তেমিন ভোক্তারাও প্রতারিত হচ্ছেন। দেশের পশু সম্পদ খাত বিশেষ করে খামারীদের উদ্বেগ বাড়ছে।
চট্টগ্রাম বন্দর ও কাষ্টমস সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে ভারত থেকে হিমায়িত মহিষের মাংস, কলিজা ও ফুসফুস আমদানি হয়েছে ৩ লাখ ৩৬ হাজার কেজি। মে মাসে ছিলো ৩ লাখ ৭৪ হাজার কেজি, জুন মাসে ৬ লাখ ৩ হাজার কেজি, জুলাই মাসে ৫ লাখ ৪৭ হাজার কেজি ও আগস্ট মাসে ৩ লাখ ৯১ হাজার কেজি। এসব মাংস ডাম্পিং দামে দেশে প্রবেশ করছে। তাছাড়া মিথ্যা তথ্য দিয়ে গরুর মাংস হিসেবে মহিষের মাংস আনার অভিযোগ উঠেছে।
চলতি বছরের মার্চ মাসে লকডাউনের মধেই ভারত থেকে ১২ লাখ ৩৭ হাজার ৫৪১ কেজি মহিষের মাংস আমদানি করা হয়েছে। অন্যান্য দেশের ফ্রোজেন হালাল বাফেলো মিট বাংলাদেশে প্রবেশ করলে ৬০ শতাংশ ডিউটি ফি দিতে হয়। তবে ভারতের জন্য ডিউটি ফি মাত্র ১১ শতাংশ। ভারতের গুজরাট, উত্তর প্রদেশ ও অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে চট্টগ্রাম বন্দর হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে এসব মাংস।
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের সাদিক এগ্রো লিমিটেডে কোরবানির জন্য গড়ে প্রস্তুত করা হয় এক হাজার ৫০০ পশু। চড়া দামে গো-খাদ্য কিনে এসব পশুপালন করা হয়। এবার একটু বেশি গরু প্রস্তুত করা হচ্ছে। কিন্তু চলমান পরিস্থিতিতে লোকসান গুণতে হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন এই খামারের মালিক।
সাদিক এগ্রোর মালিক ইমরান হোসেন বলেন, দেশের অর্থনীতি ভালো না। মানুষ চাল-ডাল কিনবে না গরু কিনবে। এবার সারা দেশে ৬০ লাখ গরু প্রস্তু করা হয়েছে। এর অর্ধেক গরুই বিক্রি হবে না। ভারতের মহিষের মাংস আমদানি বন্ধ না হলে আমরা লোকসান কাটিয়ে উঠতে পারব না।
ভারতীয় অস্বাস্থ্যকর মহিষের মাংস আমদানি বন্ধ করতে তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
জানা গেছে, ভারতের ফ্রিজিং করা মাংস দেশে কিনে আবারও ফ্রিজে রাখা হচ্ছে বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে। দুইবার ফিজিং করার কারণে এই মাংস সম্পূর্ণ অনিরাপদ হয়ে উঠছে। আমদানি করা মাংস পরীক্ষা করার জন্য যথাযথ ব্যবস্থাও বাংলাদেশে নেই। যার ফলে স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ছে। পাশাপাশি প্রতারণার সম্মুখীনও হতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শাহ এমরান বলেন, দেশের মানুষের হাতে টাকা নেই। আমরা সঙ্কটে আছি। এ অবস্থায়ও ভারতের মহিষের হিমায়িত মাংস বাজার দখল করছে। আমরা কোথায় যাব? আমরা মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছি, কাজ হচ্ছে না। সামনে আন্দোলন করা ছাড়া কোনো পথ দেখছি না।
কোনো প্রকার হিমায়িত মাংস কিংবা প্রক্রিয়াজাত মাংস আমদানির অনুমোদন না দেওয়ার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তর। ভারতীয় গরু আনা যেভাবে বন্ধ হয়েছে, একইভাবে ভারতীয় হিমায়িত মাংস আমদানি বন্ধের উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানায় সংশ্লিষ্ট সূত্র।
সূত্র : বাংলানিউজ