বঙ্গবন্ধুর কারাবন্দির কথা স্মরণ করে কাঁদলেন প্রধানমন্ত্রী

254

ঢাকা: বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি থাকা বঙ্গবন্ধুর কষ্টের কথা স্মরণ করে কেঁদেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়ার পর পাকিস্তানের হানাদার বাহিনী তাঁকে গ্রেফতার করে। হানাদার বাহিনী তাকে পাকিস্তানে নিয়ে যায়। জানি না তিনি পাকিস্তানের কারাগারে কী অবস্থায় ছিলেন। তিনি কিন্তু কখনো তার এই কষ্টের কথা, দুঃখের কথা বলেননি।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, আমরা প্রায়ই আলোচনা করি। কিন্তু কোনোদিন আমরা জানতে পারিনি তিনি কী কষ্টের ভেতর সেখানে ছিলেন।

মঙ্গলবার (২৩ জুন) সংসদে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দেয়া বক্তব্যে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু বন্দি থাকার পরও তার আত্মবিশ্বাস ছিল- এদেশ স্বাধীন হবে। এরপর দেশ স্বাধীন হয়। বাঙালি বিজয় লাভ করে। তিনি এদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের পথে অগ্রযাত্রা শুরু করেছিলেন, সেটা সমাপ্ত করে যেতে পারেননি। তার জীবনে একটাই স্বপ্ন ছিল- বাংলাদেশের মানুষ মর্যাদা নিয়ে চলবে। কিন্তু সেটা তিনি করে যেতে পারেননি। তার এই কাজটি শেষ করাই আমাদের একমাত্র পথ।

তিনি বলেন, ১৭ এপ্রিল বৈদ্যনাথতলার আম্রকানন। একই আম্রকানন কিন্তু লালকুঠি আছে। সেখানে কিন্তু প্রথম স্বাধীন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়েছিল ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল। ১৭ এপ্রিল এই মেহেরপুরের মুজিবনগরে প্রথম স্বাধীন বাংলাদেশের সরকার শপথ গ্রহণ করে। সেই আম্রকাননে থেকেই কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করে আমাদের বিজয় এনে দেয়। পলাশীর প্রান্তরে সিরাজউদ্দৌলার পতন ঘটিয়ে যে স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত করেছিল সেই সূর্য আবার আওয়ামী লীগ উদয় করে। এ জন্য আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী যারা জীবন দিয়েছেন তাদের কথা স্মরণ করি, শ্রদ্ধা জানাই।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতার একটি কোট আমি এখানে উল্লেখ করতে চাই, তিনি ১১ মার্চ ১৯৭১ সালে বলেছিলেন, ‘‘মুক্তির লক্ষ্য বাস্তবায়িত ও স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক হিসেবে বেঁচে থাকার অধিকার আদায় হওয়া না পর্যন্ত বাংলাদেশের মানুষ সংগ্রাম ও ত্যাগ স্বীকারে দৃঢ় সংকল্প থাকবে।’’

বাংলাদেশের মানুষ কিন্তু তার সেই নির্দেশনা মেনে ছিলেন। জাতির পিতা ১৯৭২ সালের ৩০ মে বলেছিলেন, ‘‘একজন মানুষ হিসেবে সমগ্র মানবজাতি নিয়েই আমি ভাবি। একজন বাঙালি হিসেবে যা কিছু বাঙালির সঙ্গে সম্পর্কিত তাই আমাকে গভীরভাবে ভাবায়। এই নিরন্তর সম্প্রীতির উৎস অক্ষয় ভালোবাসা। যে ভালোবাসা আমার রাজনীতির অস্তিত্বকে অর্থবহ করে তোলে।’’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা হয়তো আজ শারীরিকভাবে আমাদের মধ্যে নেই। তার যে আকাঙ্ক্ষা সেটা আমাদের পূরণ করতে হবে। তার অস্তিত্ব বাঙালির রন্ধ্রে রন্ধ্রে আছে। একসময় তাকে ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু সেটা মুছে ফেলতে পারেনি। সত্যকে মুছা যায় না।

তিনি বলেন, আজ আমাদের এই দিনে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আমাদের এটাই প্রতিজ্ঞা যে বাংলাদেশকে আমরা ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলব। জাতির পিতা স্বপ্ন পূরণ করব। করোনার কারণে মানুষ সমস্যায় আছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলেই মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে। আমাদের সেই ছাত্রলীগ, যুবলীগ, কৃষকলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয়া, লাশ দাফন করা থেকে শুরু করে সমস্ত কাজ করেছে। এভাবেই আমরা মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাব। জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণ করে আমাদের অঙ্গীকার।

Leave A Reply

Your email address will not be published.