স্কুল-কলেজ খুলছে না জুনেও
ঢাকা: বন্ধ থাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আসছে জুন মাসেও বন্ধ থাকছে। গতকাল বৃহস্পতিবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের জারি করা আদেশে ১৫ জুন পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার কথা বলা হলেও শিক্ষাসংশ্নিষ্ট সরকারের দুই মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জুন মাসজুড়েই প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা স্তরের সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে।
এই দুই মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলেই কেবল বন্ধ থাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হবে। জীবনযাত্রার সবকিছু স্বাভাবিক হওয়ার পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলবে। এগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে সবার আগে; আর খুলে দেওয়া হবে সবার শেষে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আকরাম আল হোসেন গতকাল বলেন, সারাদেশের ৬৫ হাজার ৬২০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫ জুন পর্যন্ত ঈদুল ফিতরের ছুটি রয়েছে। এরই মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ আগামী ১৫ জুন পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কোনোভাবেই খোলা যাবে না বলে আদেশ দিয়েছে। সে আদেশ আমরা পালন করব। ১৫ জুনের পর পরিস্থিতি কোন দিকে যায়, তা দেখে সিদ্ধান্ত হবে। কারণ করোনাভাইরাসের যে সংক্রমণ পরিস্থিতি, তাতে পুরো জুন মাসটা মনে হচ্ছে টার্নিং পয়েন্ট। তাই এ মাসে স্কুলে খুলে দেওয়ার সম্ভাবনা কম। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, আপাতত ১৫ জুন পর্যন্ত স্কুল-কলেজ ছুটিই থাকছে। তারপর কী হবে সে প্রসঙ্গে এটুকু বলতে পারি, শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি হতে পারে- এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে না।
শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, তারা মনে করেন, এ মুহূর্তে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হলেও অভিভাবকরা সন্তানদের বর্তমান পরিস্থিতিতে কিছুতেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠাবেন না।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা গতকালের আদেশে শর্তসাপেক্ষে সরকারি-বেসরকারি অফিস-আদালত এবং শিল্প-কলকারখানা সীমিত আকারে খোলার কথা বলা হলেও স্কুল-কলেজসহ সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি ১৫ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ে। আর ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ আছে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। আড়াই মাস ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সব বন্ধ। আর ২৬ মার্চ থেকে দেশে সাধারণ ছুটি চলছে। গতকালের আদেশসহ মোট আট দফায় ছুটি বাড়ানো হলো।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার বিষয়ে গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, মহামারির পর হুট করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া যায় না। কিছু নিয়ম-কানুন আছে। তিনি বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনার পরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার ব্যাপারে ইতোমধ্যে কিছু গাইডলাইন দিয়েছে। সেখানে বলা আছে, প্রতিটি শিক্ষার্থীকে বাধ্যতামূলক মাস্ক দিতে হবে। আমাদের দেশে তাহলে স্কুল-কলেজ পুনরায় খুলে দিলে মিলিয়ন মিলিয়ন মাস্ক লাগবে। সেই প্রস্তুতি কি আমাদের আছে? তিনি আরও বলেন, মহামারি শেষ হয়ে যাওয়ার পরে স্কুল থেকে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার বাড়বে। ঝরে পড়ার হার বাড়লে বাল্যবিয়ে ও শিশুশ্রম বাড়বে। সেসব পরিস্থিতি মোকাবিলার সার্বিক পদক্ষেপ কি নেওয়া হয়েছে?
শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, এখনই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার মতো পরিস্থিতি দেশে তৈরি হয়নি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসারও এক সপ্তাহ পর খোলা উচিত সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।