ইউনাইটেড হাসপাতালের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ

206

ঢাকা: রাজধানীর গুলশানে ইউনাইটেড হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ডে নিহত রোগীদের কয়েকজনের পরিবারের সদস্যরা হাসপাতালটির বিরুদ্ধে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। খবর বিবিসি বাংলার।

নিহতদের একজন ৪৫ বছর বয়সী রিয়াজুল আলম, যাকে গতকালই বিকেলে ভর্তি করা হয়েছিল সামান্য শ্বাসকষ্টের কারণে। ভর্তির কয়েক ঘণ্টা পরই আগুন লাগার কারণে চিরবিদায় নিতে হয়েছে তাকে।

রিয়াজুল আলমের স্ত্রী ফৌজিয়া আক্তার জেনি জানান, তার স্বামী একদম সুস্থ মানুষ ছিলেন। তিনি বলেন, ‘একটু শ্বাসকষ্ট ছিল, কিন্তু লাইফ সাপোর্টে ছিল না। অক্সিজেন দিয়েছিল একদম সুস্থ মানুষ।’

রিয়াজুল আলমের মতামত নিয়েই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে আইসোলেশনে নিয়েছিল বলে জানান ফৌজিয়া আক্তার জেনি।

ফৌজিয়া বলেন, ‘কিন্তু এমন করে একটা মানুষ পুড়ে মারা যাবে? তারা কিছুই করতে পারল না? এতটুকু করোনা ইউনিট থেকে দু-চারজনকে বের করতে পারল না? অবশ্যই অবহেলা ছিল। আমার হাজব্যন্ডকে মেরে ফেলা হয়েছে। পুড়ে যাওয়ার পর বলল লাইফ সাপোর্টে ছিল। কিন্তু আমার হাজব্যান্ড একদম নরমাল, হেঁটে গেছে।’

গতকাল বুধবার রাতের এ অগ্নিকাণ্ডে ইউনাইটেড হাসপাতালের করোনা ইউনিটের পাঁচজনই আইসিইউ সুবিধা সংবলিত শয্যায় ছিলেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, তারা লাইফ সাপোর্টে ছিলেন।

যদিও নিহত পাঁচজনের মধ্যে তিনজনেরই পরীক্ষার ফল করোনা নেগেটিভ ছিল। তবে করোনা সন্দেহভাজন হওয়ায় তাদের সেখানে ভর্তি করা হয়েছিল।

ফৌজিয়া আক্তার জানান, হাসপাতাল বলেন, ‘তাদের একটাই বেড আছে এবং ভর্তি হতে হলে সেটায় হতে হবে বন্ড সই দিয়ে। উপায় না পেয়ে আমরা সেখানে ভর্তি করিয়েছিলাম। কিন্তু তার সামান্য শ্বাসকষ্ট ছাড়া আর কোনো সমস্যাই ছিল না।’

নিহতদের মধ্যে আরেকজন ছিলেন ৭০ বছর বয়সী খোদেজা বেগম। তার সন্তান মোহাম্মদ আলমগীর বলছেন, তার মাও করোনা নেগেটিভ ছিলেন।

আলমগীর বলেন, ‘হাসপাতালের ওরা দায়িত্ব নিয়ে কাজ করেনি। বলেছে আইসোলেশন। আসলে মিথ্যা কথা। অক্সিজেন দিয়ে রেখে দেয়। ক্লিনারের মতো নিচু (পদের) কর্মচারী দিয়ে পরিচালনা করায়।’

আর নিহতদের আরেকজন ৭৪ বছর বয়সী ভেরুন এন্থনি পলকে গত সোমবার ওই হাসপাতালে নেওয়া হলেও দুবার পরীক্ষায় তিনি ছিলেন করোনা নেগেটিভ।

তার সন্তান আন্দ্রে এন্থনি পল বলেন, ‘যেহেতু জ্বর ছিল, সে কারণে নিয়মানুযায়ী আইসোলেশনে রাখা হয়েছিল। কিন্তু সেখানে অগ্নি নির্বাপণের কোনো ব্যবস্থাই ছিল না।’

আন্দ্রে এন্থনি পল বলেন, ‘বাবার কেয়ার নিছে। কিন্তু সেখানে কোনো ফায়ার ফাইটিং ব্যবস্থা ছিল না। বাথরুমের ব্রাশ দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেছে।’

যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, যেখানে আগুন লেগেছে সেখানে তারা পৃথকভাবে অস্থায়ী কাঠামো নির্মাণ করেছিলেন করোনা রোগীদের জন্য। পাঁচটিই বেড ছিল সেখানে আইসিইউ সুবিধাসহ।

তবে রোগীদের জন্য রাখা হাসপাতালের নিয়ম মাফিক সেখানে অক্সিজেন ও স্যানিটাইজারের মতো রাসায়নিক ছিল এবং পাশাপাশি নির্মাণ কাঠামোতেও পারটেক্সের মতো দাহ্য বস্তু ব্যবহার করা হয়েছিল বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। সাথে কিছু অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গিয়েছিল বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ স্বীকার করেছে।

ফলে পুরো জায়গাটিই হয়ে উঠেছিল উচ্চ মাত্রার ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু সকালে আগুন লাগার জায়গাটি দেখার পর সেখানে পর্যাপ্ত অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা ছিল না বলে অভিযোগ করেছেন ঢাকা উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলামও।

তবে হাসপাতালের কমিউনিকেশন বিভাগের দায়িত্বে থাকা ডা. সাগুফা আনোয়ার বিকেলে এক ব্রিফিংয়ে সব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, তারা দরকারি সব ব্যবস্থাই নিয়ে রেখেছিলেন।

এদিকে, বুধবার রাতে ইউনাইটেড হাসপাতালের করোনা ইউনিটে থাকা পাঁচজন রোগীর সবাই আগুনে নিহত হওয়ার পর তাদের মৃতদেহ আজই স্বজনদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত কমিটি ও গুলশান থানায় অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করেছে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে পুলিশের সিআইডি ও ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত দল।

Leave A Reply

Your email address will not be published.