ইউনাইটেড হাসপাতাল : আগুনে নিহত রোগীর স্বজনের তীব্র ক্ষোভ, খুনের অভিযোগ
ঢাকা: বাংলাদেশে ঢাকার গুলশানে ইউনাইটেড হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ডে নিহত রোগীদের কয়েকজনের পরিবারের সদস্যরা হাসপাতালটির বিরুদ্ধে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
নিহতদের একজন ৪৫ বছর বয়সী রিয়াজুল আলম, যাকে গতকালই বিকালে ভর্তি করা হয়েছিল সামান্য শ্বাসকষ্টের কারণে।
ভর্তির কয়েক ঘণ্টা পরই আগুন লাগার কারণে চিরবিদায় নিতে হয়েছে তাকে।
তার স্ত্রী ফৌজিয়া আক্তার জেনি বলছেন তার স্বামী একদম সুস্থ মানুষ ছিলেন।
“একটু শ্বাসকষ্ট ছিলো কিন্তু লাইফ সাপোর্টে ছিল না। অক্সিজেন দিয়েছিল একদম সুস্থ মানুষ”।
তিনি বলেন তার মতামত নিয়েই তাকে আইসোলেশনে নিয়েছিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
“কিন্তু এমন করে একটা মানুষ পুড়ে মারা যাবে? তারা কিছুই করতে পারলো না? এতটুকু করোনা ইউনিট থেকে দু চার জনকে বের করতে পারলো না? অবশ্যই অবহেলা ছিলো। আমার হাজব্যন্ডকে মেরে ফেলা হয়েছে। পুড়ে যাওয়ার পর বলল লাইফ সাপোর্টে ছিল। কিন্তু আমার হাজব্যান্ড একদম নরমাল, হেঁটে গেছে”।
বুধবার রাতের এ অগ্নিকাণ্ডে ইউনাইটেড হাসপাতালের করোনা ইউনিটের পাঁচজনই আইসিইউ সুবিধা সম্বলিত শয্যায় ছিলেন এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে তারা লাইফ সাপোর্টে ছিলেন।
যদিও নিহত পাঁচজনের মধ্যে তিনজনেরই পরীক্ষার ফল করোনা নেগেটিভ ছিল। তবে করোনা সন্দেহভাজন হওয়ায় তাদের সেখানে ভর্তি করা হয়েছিল।
ফৌজিয়া আক্তার বলছেন হাসপাতাল বলেছে তাদের একটাই বেড আছে এবং ভর্তি হতে হলে সেটায় হতে হবে বন্ড সই দিয়ে।
“উপায় না পেয়ে আমরা সেখানে ভর্তি করিয়েছিলাম। কিন্তু তার সামান্য শ্বাসকষ্ট ছাড়া আর কোনো সমস্যাই ছিল না”।
নিহতদের মধ্যে আরেকজন ছিলেন সত্তর বছর বয়সী খোদেজা বেগম। তার সন্তান মোহাম্মদ আলমগীর বলছেন তার মাও করোনা নেগেটিভ ছিলেন।
তিনি বলেন, “হাসপাতালের ওরা দায়িত্ব নিয়ে কাজ করেনি। বলেছে আইসোলেশন। আসলে মিথ্যা কথা। অক্সিজেন দিয়ে রেখে দেয়। ক্লিনারের মতো নিচু (পদের) কর্মচারী দিয়ে পরিচালনা করায়”।
আর নিহতদের আরেকজন চুয়াত্তর বছর বয়সী ভেরুন এন্থনি পলকে গত সোমবার ওই হাসপাতালে নেয়া হলেও দু বার পরীক্ষায় তিনি ছিলেন করোনা নেগেটিভ।
তার সন্তান আন্দ্রে এন্থনি পল বলছেন যেহেতু জ্বর ছিলো সে কারণে নিয়মানুযায়ী আইসোলেশনে রাখা হয়েছিলো কিন্তু সেখানে অগ্নি নির্বাপণের কোনো ব্যবস্থাই ছিল না।
“বাবার কেয়ার নিছে। কিন্তু সেখানে কোনো ফায়ার ফাইটিং ব্যবস্থা ছিল না। বাথরুমের ব্রাশ দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেছে।”
যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে যেখানে আগুন লেগেছে সেখানে তারা পৃথকভাবে অস্থায়ী কাঠামো নির্মাণ করেছিলেন করোনা রোগীদের জন্য। পাঁচটিই বেড ছিলো সেখানে আইসিইউ সুবিধাসহ।
তবে রোগীদের জন্য রাখা হাসপাতালের নিয়মমাফিক সেখানে অক্সিজেন ও স্যানিটাইজারের মতো রাসায়নিক ছিল এবং পাশাপাশি নির্মাণ কাঠামোতেও পারটেক্সের মতো দাহ্য বস্তু ব্যবহার করা হয়েছিল বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। সাথে কিছু অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গিয়েছিল বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ স্বীকার করেছে।
ফলে পুরো জায়গাটিই হয়ে উঠেছিল উচ্চ মাত্রার ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু সকালে আগুন লাগার জায়গাটি দেখার পর সেখানে পর্যাপ্ত অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা ছিল না বলে অভিযোগ করেছেন ঢাকা উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলামও।
তবে হাসপাতালের কমিউনিকেশন বিভাগের দায়িত্বে থাকা ডা: সাগুফা আনোয়ার বিকেলে এক ব্রিফিং-এ সব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন তারা দরকারি সব ব্যবস্থাই নিয়ে রেখেছিলেন।
এদিকে, বুধবার রাতে ইউনাইটেড হাসপাতালের করোনা ইউনিটে থাকা পাঁচজন রোগীর সবাই আগুনে নিহত হবার পর তাদের মৃতদেহ আজই স্বজনদের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত কমিটি ও গুলশান থানায় অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করেছে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে পুলিশের সিআইডি ও ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত দল। সূত্র : বিবিসি বাংলা