পশ্চিমবঙ্গের স্থলভাগে ঢুকেই তাণ্ডব চালানো শুরু করেছে আম্ফান
নিউজ ডেস্ক: স্থলভাগে ঢুকতে শুরু করেছে আমফান। পশ্চিমবঙ্গের উপকূলে তা আছড়ে পড়ছে। প্রায় চার ঘণ্টা ধরে ঝড় চলবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া দফতর। খবর ডয়চে ভেলের।
পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ ২৪ পরগনার উপকূলে ঘূর্ণিঝড় আমফান স্থলভাগে ঢুকে পড়েছে বলে জানালো কলকাতার আলিপুর আবহাওয়া দফতর। হাওয়া অফিসের পূর্বাঞ্চলের অধিকর্তা সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ভারতীয় সময় দুপুর আড়াইটে নাগাদ পশ্চিমবঙ্গের উপকূলে ঝড় প্রথম আছড়ে পড়েছে। তবে তাঁর বক্তব্য, ঝড়ের তাণ্ডব ক্রমশ বাড়বে। আড়াইটের সময় ঝড়ের মুখ কেবল স্থলভাগে প্রবেশ করেছে। কিন্তু ঝড়ের কেন্দ্র বা চোখ স্থলভাগে আরও কয়েক ঘণ্টা পরে পৌঁছবে। সব মিলিয়ে প্রায় চার ঘণ্টা ধরে চলবে আমফানের তাণ্ডব।
দিঘায় প্রত্যক্ষদর্শীরা ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, দুপুর আড়াইটের পর থেকে ঝড়ের তীব্রতা অনেকটা বেড়েছে। এই মুহূর্তে ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটার বেগে হাওয়া বইছে সেখানে। তবে এখনও পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, দক্ষিণ ২৪ পরগনার কোনও কোনও এলাকায় ঘণ্টায় ১৪০ কিলোমিটার বেগে হাওয়া বইতে শুরু করেছে। কলকাতায় এই মুহূর্তে হাওয়ার গতিবেগ প্রায় ৭০ কিলামিটার প্রতি ঘণ্টা। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, স্থলভাগে প্রবেশ করে পূর্ব কলকাতার উপর দিয়ে এই ঝড় আরও পূর্ব দিকে বয়ে যাবে। ১৭৩৭ সালের পরে এই প্রথম সরাসরি কোনও ঝড় কলকাতার উপর দিয়ে বয়ে যাবে। আয়লার সময়েও ঝড়ের তাণ্ডব দেখেছিল কলকাতা। কিন্তু সে বারেও ঝড় সরাসরি কলকাতার উপর দিয়ে যায়নি। বলা হয় ঝড়ের লেজ ছুঁয়ে গিয়েছিল পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী শহরকে।
বুধবার সকাল থেকেই দিঘার সমুদ্র অশান্ত ছিল। গার্ডওয়াল টপকে সমুদ্রের জল রাস্তায় চলে এসেছে। দিঘা, মন্দারমণি থেকে শুরু করে উপকূলবর্তী পশ্চিমবঙ্গে সমুদ্রে জলোচ্ছ্বাস চলছে সকাল থেকেই। ক্রমশ তা বাড়ছে। কাকদ্বীপে ঝড় এতটাই প্রবল হয়েছে যে অ্যাসবেস্টাসের ছাদ উড়ে যাচ্ছে। কলকাতায় একটি বাড়ির বারান্দা ভেঙে পড়েছে। একবার দিঘা ও সুন্দরবনের ওপর আছড়ে পড়ার পরেই যে আমফান থেমে যাবে তা মনে করার কারণ নেই। তার প্রভাব ১২ ঘণ্টা ধরে চলবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। হলদিয়ায় হলদি নদীতে জল প্রায় পাঁচ মিটার বেড়ে গিয়েছে। নদীতে ঢেউ উঠছে। নদীর ধারে যে বসার জায়গাগুলি ছিলো, তা ডুবে গিয়েছে।
আমফানের মূল কেন্দ্র এখনও দিঘা থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে। আপাতত ওড়িশা উপকূলের খুব কাছ দিয়ে তা পশ্চিমবঙ্গের দিকে আসছে। ওড়িশার পারাদ্বীপে প্রায় ১১০ কিলোমিটার বেগে ঝড়শুরু হয়ে গিয়েছে। সঙ্গে প্রবল বৃষ্টি। পুরীতে ঝড়ের বেগ বাড়ছে। গোপালপুরেও।
কলকাতাতেও মঙ্গলবার সারা রাত বৃষ্টি হয়েছে। বুধবার দুপুরের পর থেকে বৃষ্টি বেড়েছে। সঙ্গে প্রবল হাওয়া। পাড়ায় পাড়ায় পুলিশ ঘোষণা করছে, কেউ যেন বাড়ির বাইরে না যান। কলকাতা বিমানবন্দর বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বিমানবন্দরে থাকা দশটি ছোট বিমান রাঁচি, গুয়াহাটি ও বারাণসীতে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কারণ, আশঙ্কা ছিলো, তীব্র ঘূর্ণিঝড়ে ওই বিমান উড়ে যেতে পারে। বড় বিমানগুলি রাখা আছে। সেগুলি খুব ভারি বলে ঝড়ের তাণ্ডবেও কিছু হবে না বলে মনে করা হচ্ছে।
তবে এর থেকে অনেক বড় ক্ষতির আশঙ্কা থাকছে মেদিনীপুর থেকে সুন্দরবন পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকায়। সেখানে আশঙ্কা নদী বাঁধ নিয়ে। অনেক বাঁধের অবস্থা খারাপ। ফলে তীব্র ঘূর্ণিঝড়ের ফলে বাঁধ ভেঙে নদীর জল ঢুকে পড়বে বিস্তীর্ণ এলাকায়। মেদিনীপুরে সারারাত ধরে জরুরি ভিত্তিতে কিছু বাঁধ মেরামতিহয়েছে। সিপিএম নেতা এবং প্রাক্তন মন্ত্রী কান্তি গঙ্গোপাধ্যায় দীর্ঘদিন ধরে দক্ষিণ ২৪ পরগনার রায়দিঘি সহ সুন্দরবনে কাজ করেছেন এবং এখনও করছেন। ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেছেন, ”আমার পূর্ব অভিজ্ঞতা বলছে, ঘূর্ণিঝড়ের গতিবেগ ১৪০ কিলোমিটার হলে অন্তত ১০০০ কিলোমিটারের বাঁধ ভাঙবে। বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হবে। তখন পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর হবে। আমি রায়দিঘিতে হাজার খানেক লোককে নিরাপদ জায়গায় নিয়ে এসেছি। মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখে বলেছি, সব ধরনের সাহায্য করতে চাই।”
আমফান তার গতিও ক্রমশ বাড়াচ্ছে। আগে তা ঘণ্টায় ১৪ তেকে ১৫ কিলোমিটার গতিতে ধেয়ে আসছিলো। এখন তার গতিবেগ আরও বেড়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ দিন সন্ধের পর ভরা কোটাল শুরু হবে। তার আগে ঝড় ঢুকে পড়লে খানিকটা স্বস্তি। কিন্তু ভরা কোটালের মধ্যে ঝড় ঢুকলে ক্ষতি আরও বাড়বে। নদী এবং সমুদ্রের জল ভাসিয়ে দেবে বিস্তীর্ণ এলাকা। এ দিন দুপুরেও হাওয়া অফিসের আধিকারিকরা জানিয়েছেন দিঘা ও সুন্দরবনের ওপর দিয়ে ১৩৫ থেকে ১৫৫ কিলোমিটার গতিতে বয়ে যাবে আমফান। সর্বোচ্চ গতিবেগ হতে পারে ১৮৫ কিলোমিটার। কলকাতাতে ১০০ থেকে ১৩০ কিলোমিটার বেগে ঝড় হবে বলে জানানো হয়েছে।