আমি নিজেও SMS পাই, আপা আমার ঘরে খাবার নাই : সংসদে প্রধানমন্ত্রী
ঢাকা: করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে কেউ যেন খাবারে কষ্ট না পায় সেজন্য সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘অনেক সময় আমি নিজেও এসএমএস পাই, এসএমএস করে- ‘আপা আমার ঘরে খাবার নাই’। সাথে সাথে আমরা উদ্যোগ নিই। শুধু তার (ওই মেসেজদাতা) নয়, আশপাশে কোথাও কারা এভাবে কষ্টে আছে, যারা হাত পাততে পারবে না, কিন্তু তাদের ঘরে খাবার নেই, চাইতে পারছে না- তাদের ঘরে খাবার পৌঁছে দেয়ার সেই ব্যবস্থাটাও কিন্তু আমরা নিয়েছি এবং নিচ্ছি।
শনিবার (১৮ এপ্রিল) জাতীয় সংসদের সংক্ষিপ্ত অধিবেশনে সমাপনী বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে চলতি সংসদের সপ্তম এ অধিবেশন বিকেল ৫টায় শুরু হয়।
করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রক্ষায় ব্যতিক্রমী এ অধিবেশন শুরু হয় বাছাইকৃত সংসদ সদস্যদের (এমপি) নিয়ে। সম্ভব সব ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মেনে এতে অংশ নেন এমপিরা। এসময় তাদের অধিকাংশের মুখে মাস্ক ও হাতে গ্লাভস দেখা যায়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে দেশে যেন খাদ্য ঘাটতি না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখছে সরকার। বর্তমানে ৫০ লাখ মানুষকে রেশন কার্ড দেয়া হচ্ছে। আরও ৫০ লাখ লোককে রেশন কার্ড দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এটি বাস্তবায়ন হলে এক কোটি লোক খাদ্য সহায়তা পাবেন। আর এই এক কোটি লোকের পরিবারের সদস্য সংখ্যা যদি পাঁচজন হয়, তাহলে পাঁচ কোটি লোক খাদ্য সহায়তার আওতায় আসবেন। খাদ্যে যেন কোনো সমস্যা না হয় সে ব্যবস্থা আমরা করতে পারবো।
শেখ হাসিনা বলেন, এই করোনা নিয়ে অনেক গবেষণা হচ্ছে। অনেক চিন্তা হচ্ছে। অনেকেই বলছে শীত হলে বেশি হয়, গরম হলে কমে। আবার বলে গরম হলেও থাকবে। এর স্থায়িত্ব কী, অদ্ভুত একটা অবস্থা সারাবিশ্বে। কত শক্তিশালী দেশ, কত তাদের শক্তিশালী অস্ত্র। কোনো কিছুই কাজে লাগছে না। একটা ভাইরাস যা চোখে দেখা যায় না, কিন্তু তার কারণে সারাবিশ্ব স্থবির। সারাবিশ্বের মানুষ ঘরে বন্দী। এরকম অদ্ভুত পরিস্থিতি বোধ হয় আর কখনো হয়নি।
‘এজন্য আমরা আশু করণীয় হিসেবে মধ্যমেয়াদী এবং দীর্ঘমেয়াদী ব্যবস্থা নিয়েছি। আগামী তিন বছর অর্থনৈতিকভাবে দেশের মানুষ যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, তার জন্য আমরা প্রণোদনা প্যাকেজ ইতোমধ্যেই ঘোষণা দিয়েছি। এই সংকট যেন কাটিয়ে উঠতে পারি সেভাবে ব্যবস্থা নিয়েছি। অর্থনৈতিকভাবে যে নেতিবাচক দিকগুলো সামনে আসতে পারে সেটা যেন আমরা মোকাবেলা করতে পারি, মানুষের কর্মসংস্থান, মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা দেয়া, মানুষের জীবনটা যেন চলতে পারে এজন্য সর্বস্তরের যেমন- শিল্প, কৃষি, একেবারে খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ, নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত, শ্রমিক, কৃষক, তাঁতি, ব্যবসায়ী- সবার কথা বিবেচনা করে আমরা এই প্যাকেজ তৈরি করেছি।’
তিনি বলেন, আমরা যে ৯৫ হাজার ৬১৯ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ দিয়েছি, তা জিডিপির ৩ দশমিক ৩ শতাংশ। আমি আজকে দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি, আমাদের ৩৩৩ যে হটলাইন আছে সেটিতে সংযোগ রেখে এই ধরনের পরিস্থিতিতে যারা পড়বে তাদের ঘরে খাবার পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করতে। সেটা ইনশাল্লাহ আমরা করবো। আল্লাহর রহমতে আমাদের খাদ্যের অভাব নেই এবং হবে না। সেই সাথে কৃষি কাজ যেন অব্যাহত থাকে এজন্য ৫ শতাংশ সুদের কথা বলেছিলাম ওটা এখন কমিয়ে ৪ শতাংশ করেছি। তাছাড়া দুই কোটি কৃষক ১০ টাকায় ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে তাদের ভর্তুকি পাবেন। এছাড়া কৃষি শ্রমিকরা কোথাও কাজ করতে যেতে চাইলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেয়া আছে, তারা যেন ধান কাটার শ্রমিকদের পৌঁছে দেন।