অনুকুল পরিবেশ পেলে অর্থনীতিকে এগিয়ে নেবে এসএমই খাত: সালমান এফ রহমান
ঢাকা: দেশে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পখাতের (এসএমই) বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। এ সম্ভাবনা কাজে লাগাতে অনুকুল পরিবেশ জরুরি। আর এই পরিবেশ তৈরি করতেই কাজ করছে সরকার। খবর বাসসের।
ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) এবং বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক) আয়োজিত কর্মশালায় প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এসব কথা বলেন।
শনিবার রাজধানীর পল্টনে ইআরএফ কার্যালয়ে এ কর্মশালার আয়োজন করা হয়। ইআরএফ সভাপতি সাইফ ইসলাম দিলালের সভাপতি অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন শিল্পসচিব মো. আব্দুল হালিম, বিসিকের চেয়ারম্যান মো. মোশতাক হাসান, ইউরোপীয় ইউনিয়নের ফার্স্ট সেক্রেটারি ম্যানফ্রেড ফ্রেনহোলজ এবং ইআরএফের সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশিদুল ইসলাম।
সালমান এফ রহমান বলেন, দেশে এসএমইখাতের বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমানে গার্মেন্টসখাতের ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্প ৭ বিলিয়ন ডলার। এর পুরোটাই এসএমই। এছাড়া এখাত থেকে ১ বিলিয়ন ডলার সরাসরি রফতানি হয়। অভ্যন্তরীণ বাজারেও এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এছাড়াও আইটিখাতে ফ্রিল্যান্সের সম্ভাবনা ব্যাপক। বর্তমানে দেশে ৬ থেকে ৭ লাখ ফ্রিল্যান্সার রয়েছে। কিন্তু তাদেরকে সাপোর্ট দেয়ার মতো অবকাঠামো তৈরি হয়নি। কিন্তু চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য এই অবকাঠামো খুবই জরুরি।
তিনি বলেন, ইতিমধ্যে ফ্রিল্যান্সারদের জন্য ডাটাবেইজ তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আশা করছি আগামী জানুয়ারির মধ্যে এটি তৈরি হবে। এর মাধ্যমে প্রত্যেক ফ্রিল্যান্সারকে রেজিস্ট্রেশনের আওতায় আনা যাবে। এ রেজিস্ট্রেশন কার্ড থাকলেই তারা টাকা উঠাতে ব্যাংক কোনো প্রশ্ন করবে না। এ সনদ দিয়েই তারা অন্যান্য কাজ সহজেই করতে পারবেন।
অনুষ্ঠানে শিল্প সচিব আব্দুল হালিম, সরকারের নীতি হচ্ছে দেশের জাতীয় অর্থনীতিকে ২০৩০ সালের মধ্যে বিসিকের অবদান ৪০ শতাংশে নিয়ে যাওয়া। এর মধ্যে এসএমইর অবদান ২৮ শতাংশ। যা আগে ছিল ২৫ শতাংশ। দিন দিন জাতীয় অর্থনীতিতে এসএসইর অবদান বাড়ছে। বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ হলেও জাতীয় অর্থনীতিতে শিল্পের অবদান সবচেয়ে বেশি। ফলে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমাদের এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে।
তিনি বলেন, বিসিকের আওতায় চামড়াখাত এগিয়ে চলছে। বতর্মানে এখাতের রফতানি ১ বিলিয়ন ডলার। ২০২৪ সালের মধ্যে এটি ৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হবে।
ম্যানফ্রেড ফ্রেনহোলজ বলেন, অর্থনৈতিক দিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। কিন্তু সহজে ব্যবসা করার সূচকে পিছিয়ে রয়েছে। যেমন বিশ্বব্যাংকের ডুইং বিজনেস রিপোর্টে সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১৬৮। এছাড়াও প্রতিযোগিতা সক্ষমতা সূচক এবং ডিজিটাল সূচকেও পিছিয়ে বাংলাদেশ। তিনি বলেন, বর্তমানে দেশে ৪ কোটি মানুষ দরিদ্র সীমার নিচে। এদের উন্নয়নে এসএমই বিশাল ভুমিকা রাখতে পারে।
মো. মোশতাক হাসান বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে সরকার দেশে ৩ কোটি মানুষের কর্মসংস্থানের ঘোষনা দিয়েছে। আশা করছি, এর ১ কোটিই তৈরি হবে বিসিকের মাধ্যমে।
তিনি বলেন, আমরা ২০ হাজার একর জমিতে ৫০টি শিল্পনগরী তৈরির চেষ্টা করছি। এছাড়া প্রায় ১০ হাজার লোককে প্রশিক্ষন দেয়া হবে। বর্তমানে বিসিক শিল্প নগরিতে সর্বোচ্চ এক হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ করেছে উদ্যোক্তারা।
তিনি বলেন, এসএমই উদ্যোক্তাদের সুযোগ না দিলে তারা অপরিকল্পিতভাবে শিল্প গড়ে উঠবে। যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। এজন্য দেশের আনাচে কানাচে যে শিল্প নগরী ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে, সেখানে উদ্যোক্তাদের প্লট দেয়া, ঋণের ব্যবস্থাসহ ব্যবসার সুযোগ দিতে হবে।
তিনি জানান,গত ৬২ বছরে দেশে ৭৬টা শিল্প নগড়িতে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার উদ্যোক্তাকে প্লট দেয়া হয়েছে। এতে সাড়ে ৮ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। এছাড়া দেশের রফতানি বাজারে বিসিকের অবদান ১০ শতাংশ। আমরা প্রায় ৬ বিলিয়ন মূল্যের পণ্য উৎপাদন করে থাকি। এর সিংহভাগ রফতানি করা হয়।