আত্মগোপনে সম্রাট যেখানে যেমন ছিলেন

308

নিউজ ডেস্ক: ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরুর ১৯ দিনের মাথায় রবিবার (৬ অক্টোবর) র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) হাতে আটক হয়েছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল হোসেন সম্রাট। আটকের পরপরই তাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তবে অভিযান শুরুর পর আত্মগোপনে যাওয়া সম্রাট কোথায়, কীভাবে, কেমন ছিলেন- তা র‌্যাবের পক্ষ থেকে বলা না হলেও একটি জনপ্রিয় গণমাধ্যমের অনুসন্ধানে বেশকিছু তথ্য বেরিয়ে এসেছে।

তথ্য অনুযায়ী দেখা যায়, গত ১৮ সেপ্টেম্বর বিকালে মতিঝিলের ক্লাবগুলোতে র‌্যাবের ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু হলে সম্রাট চিন্তায় পড়ে যায়। যোগাযোগ শুরু করে রাজনৈতিক নেতা ও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে। অভিযানের প্রথম দুদিন সম্রাট ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে কাকরাইলে নিজের কার্যালয়ে অবস্থান করেন।

সূত্রের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, গত ২৬ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে কাকরাইল থেকে বেরিয়ে প্রথমে ধানমন্ডি যুবলীগ চেয়ারম্যানের বাসায় আত্মরক্ষার জন্য আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করেন। কাকরাইল থেকে সম্রাট বের হয়ে যুবলীগ চেয়ারম্যানের বাসায় গেছে এমন তথ্য নিশ্চিত হয়ে রাতেই আইনশৃঙ্খলাবাহিনী সেখানে নজরদারির প্রস্তুতি নেয়। প্রশাসনিক সোর্স সম্রাটকে সেই তথ্য জানালে সেখান থেকে বের হয়ে যান তিনি। এরপর বনানীতে গিয়ে প্রথমে একজন বড় নেতার বাসায় আশ্রয় প্রার্থনা করেন। কিন্তু সেখানে আশ্রয় না পেয়ে ওঠেন এক সংসদ সদস্যের বাসায়। এরপরও আইনশৃঙ্খলাবাহিনী থেকে নিজেকে নিরাপদে রাখতে পারেনি সম্রাট। গোয়েন্দা নজরদারির মধ্যেই সে বনানীর সেই বাসাতেই থাকেন।

সূত্র জানায়, সেখানে থাকা অবস্থায় কোনো ধরনের সহযোগিতা পাননি সম্রাট। তার নিয়মিত ওষুধ কিনতে সঙ্গে থাকা কেউ যাবার অনুমতিও পায়নি। শেষ তিনদিন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলে দই চিড়া খেতে চায় সে। তারপরও বাইরে যাওয়ার অনুমতি দেয়নি গোয়েন্দারা।

জানা গেছে, তাকে গ্রেফতার সংক্রান্ত প্রক্রিয়া বা যাবতীয় নির্দেশনা অপেক্ষায় থাকে প্রশাসন। তবে সম্রাটের শারীরিক অবস্থা ভালো না। গত ২৮ সেপ্টেম্বর তার হার্টের ভাল্ব পরিবর্তন করার জন্য সিঙ্গাপুরে যাওয়ার তারিখ নির্ধারিত ছিল। অপারেশন করাতে না পারলে ভাল্ব ক্রমান্বয়ে ছোট হয়ে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া শারীরিক নানা রোগের চিকিৎসাও নিচ্ছে সম্রাট।

বনানীর ওই বাসা থেকে বের হয়ে সম্রাট ও তার সহযোগী আরমান কীভাবে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের আলকড়া ইউনিয়নের কুঞ্জশ্রীপুর গ্রামে গেলেন তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

শনিবার (৫ অক্টোবর) দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে জানা যায় চৌদ্দগ্রামের কুঞ্জশ্রীপুর গ্রামে র‌্যাবের অভিযান চলছে। জামায়াতের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ফেনী পৌরসভার মেয়র আলাউদ্দিনের বোন জামাই ও স্টার লাইন গ্রুপের পরিচালক মনির চৌধুরী চক্কার বাসা থেকে সম্রাট ও আরমানকে আটক করে নিয়ে যায় র‌্যাব। ঘটনার সত্যতা জানতে রবিবার ভোরে র‌্যাব-১১ এর একজন কর্মকর্তাকে ফোন করা হলে তিনি এ বিষয়ে কোনো কিছু জানাননি। একইদিন সকাল সাড়ে নয়টার দিকে আলকড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এ কে এম গোলাম ফারুককে ফোন করা হলে জামায়াত নেতার বাড়ি থেকে সম্রাটকে আটকের তথ্য নিশ্চিত করেন। অন্যদিকে সকাল নয়টার দিকে র‌্যাবের পক্ষ থেকেও সম্রাট ও তার সহযোগী আরমানকেও আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।

সম্রাট কীভাবে কুমিল্লায় গেলেন জানতে চাইলে র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আটক এড়াতে সম্রাট যে পন্থাগুলো অবলম্বন করেছে তা বলতে চাই না। কুমিল্লায় কেন এবং কীভাবে গেলো সেটাও বলতে চাই না। সবকিছু গণমাধ্যমে আসলে পরবর্তী সময়ে সমস্যা হয়। আমরা রাষ্ট্রের প্রয়োজনে কাউকে গ্রেফতারের সিদ্ধান্ত নিতে চাইলে অপরাধীরা তখন কৌশলগুলো অবলম্বন করবে। এজন্য কৌশল না বলাই ভালো। ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরুর পরপরই ইসমাইল হোসেন সম্রাট আত্মগোপনে চলে যায়। এমনকি শেষ পর্যন্ত ভারতে পালিয়ে যাওয়ারও সব বন্দোবস্ত করে ফেলে। তবে র‌্যাবের গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত থাকায় সম্রাট ও তার সহযোগী আরমানকে আটক করা সম্ভব হয়েছে।’

কুমিল্লার একটি সূত্র জানায়, ফেনীর পৌর মেয়র আলাউদ্দিনের বোন জামাই জামায়াত নেতা মনির চৌধুরী চক্কা স্টার লাইন গ্রুপের পরিবহন সেক্টরটি দেখাশোনা করেন। সেই সুবাদে তার সাথে সম্পর্ক গড়ে ওঠে যুবলীগের আরেক নেতা এনামুল হক আরমানের। আর ওই আরমানের বুদ্ধিতেই চৌদ্দগ্রামে মনির হোসেন চক্কার বাসায় গিয়ে ওঠেন সম্রাট।- উজ্জল জিসান, সারাবাংলা

Leave A Reply

Your email address will not be published.