প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরে প্রাধান্য পাবে রোহিঙ্গা সংকট

494

ঢাকা: চীনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাঁচ দিনের সরকারি সফরে বিনিয়োগ এবং অর্থনৈতিক বিষয়ের পাশাপাশি রোহিঙ্গা সংকটকে বেশি প্রাধান্য দেবেন তিনি। খবর ইউএনবি’র।

প্রধানমন্ত্রীর সফর নিয়ে শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন বলেন, ডালিয়ানে ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) বার্ষিক সভায় যোগ দেবেন শেখ হাসিনা।

তিনি চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াং ও রাষ্ট্রপতি শি চীনপিংসহ দেশটির শীর্ষ নেতাদের সাথে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন।

আগামী ১ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি বিশেষ ফ্লাইট চীনের ডালিয়ানে পৌঁছবে। পরের দিন ডালিয়ান আন্তর্জাতিক কনফারেন্স সেন্টারে ডব্লিউইএফ সামার দাভোসে বক্তব্য দেবেন প্রধানমন্ত্রী।

৩ জুলাই স্থানীয় সময় সকাল ১১টায় ডালিয়ান থেকে একটি বিশেষ চার্টার্ড ফ্লাইটে বেইজিং যাবেন প্রধানমন্ত্রী এবং একইদিন প্রবাসী বাংলাদেশিদের সংবর্ধনায় অংশ নেবেন।

পরেরদিন সকালে শেখ হাসিনা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন এবং গ্রেট হল অব দ্য পিপলে বীরদের স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।

পরে তিনি চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াংয়ের সঙ্গে একটি দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন এবং গ্রেট হল অব দ্য পিপলে চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বৈঠকে তারা দ্বিপাক্ষিক, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করবেন।

শেখ হাসিনা চীনের প্রধানমন্ত্রীর সাথে রোহিঙ্গা সংকট নিয়েও আলোচনা করবেন।

বৈঠক শেষে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হবে।

চুক্তিগুলো হলো- ডিপিডিসির আওতাধীন এলাকায় বিদ্যুৎ ব্যবস্থা সম্প্রসারণ ও শক্তিশালীকরণ নিয়ে ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্ট, ডিপিডিসির আওতাধীন এলাকায় বিদ্যুৎ ব্যবস্থা সম্প্রসারণ ও শক্তিশালীকরণ নিয়ে গভর্নমেন্ট কনসেশনাল লোন এগ্রিমেন্ট, ডিপিডিসির আওতাধীন এলাকায় বিদ্যুৎ ব্যবস্থা সম্প্রসারণ ও শক্তিশালীকরণ নিয়ে প্রিফারেনশিয়াল বায়ার্স ক্রেডিট লোন এগ্রিমেন্ট, পিজিসিবি প্রকল্পের আওতায় বিদ্যুৎ গ্রিড নেটওয়ার্ক জোরদার প্রকল্পের জন্য ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্ট, বাংলাদেশ ও চীন সরকারের মধ্যে অর্থনীতি ও কারিগরি সহযোগিতা বিষয়ক চুক্তি, ইনভেস্টমেন্ট কোঅপারেশন ওয়ার্কিং গ্রুপ প্রতিষ্ঠা নিয়ে সমঝোতা স্মারক, ইয়ালু ঝাংবো ও ব্রহ্মপুত্র নদীর তথ্য বিনিময় সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক ও তা বাস্তবায়নের পরিকল্পনা এবং সাংস্কৃতিক বিনিময় ও পর্যটন কর্মসূচি নিয়ে সমঝোতা স্মারক।

প্রধানমন্ত্রী গ্রেট হল অব দ্য পিপলে চীনের প্রধানমন্ত্রী আয়োজিত এক ভোজসভায় অংশ নেবেন। একই দিন তিনি চীনা ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের সঙ্গে একটি বিজনেস রাউন্ডটেবিল বৈঠকে অংশ নেবেন।

৫ জুলাই এনপিসি চেয়ারম্যান লি ঝাংশুর সাথে প্রধানমন্ত্রীর একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। পরে বিকালে শেখ হাসিনা চীনের প্রেসিডেন্টের সাথে দিয়াওইয়ুতাই রাষ্ট্রীয় অতিথিশালায় এক বৈঠকে মিলিত হবেন এবং রোহিঙ্গা সমস্যাসহ বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক ও আঞ্চলিক বিষয়ে আলোচনা করবেন।

বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী একই স্থানে চীনা প্রেসিডেন্টের আয়োজিত একটি ভোজসভায় অংশ নেবেন।

বেশি প্রাধান্য পাবে রোহিঙ্গা ইস্যু

এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, চীনা নেতৃবৃন্দের সাথে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের সময় রোহিঙ্গা সংক্রান্ত বিষয় বেশি গুরুত্ব পাবে।

তিনি বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে চীন মিয়ানমারকে ব্যাকআপ দিচ্ছে বাংলাদেশ তেমনটা মনে করে না। ‘চীনের একটি অবস্থান রয়েছে যে তারা আমাদের সাহায্য করছে এবং সমস্যার সমাধান করার জন্য আমাদের সমর্থন করছে।’

‘তারা (চীন) আমাদের বার বার বলেছে যে রোহিঙ্গারা তাদের দেশে ফিরে যাক,’ যোগ করেন তিনি।

দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে চীন সমস্যার সমাধান চায় জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে চীন বার বার আমাদের সহায়তা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

ড. মোমেন জানান, চীন সফরে দেশটির নেতাদের তারা এ কথাটিই বোঝানোর চেষ্টা করবেন যে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের নাগরিক এবং বাংলাদেশ তাদের অল্প সময়ের জন্য আশ্রয় দিয়েছে।

তিনি আরও জানান, এটাও বলা হবে যে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে দীর্ঘ সময় ধরে ধাকলে এ অঞ্চলে অনিশ্চিয়তা তৈরি হতে পারে। যা পুরো অঞ্চলের উন্নয়নের জন্য হুমকি হবে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.