যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগে মতলববাজির নিন্দায় সংবাদ সম্মেলন
নিউইয়র্ক : ৫ বছর আগে দুর্বৃত্তের বেধড়ক পিটুনিতে নিহত হন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নজমুল ইসলাম। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন আরেক সহ-সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা সিরাজউদ্দিন আহমেদ। সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুর রহমানকে বহিষ্কার করা হয়েছে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা বিরোধী অপরাধে। গুরুতরভাবে অসুস্থ ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক কাজী মনিরুল হকও মারা গেছেন ৬ বছর আগে। এসব শুন্য পদ পূরণের অনুমতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। সেই নির্দেশ বাস্তবায়িত করার নামে নিজের পছন্দের ৪৬ জনকে কো-অপ্ট করা হয়েছে। যদিও সাধারণ সম্পাদক পদটি এখনও অপূর্ণই রয়ে গেছে। এভাবেই দলের সভাপতি এবং যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের দেখভালের দায়িত্বে থাকা শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের নাম ভাঙিয়ে একের পর এক অসাংগঠনিক কর্মকান্ড চালাচ্ছেন মেয়াদ্দোত্তীর্ণ এ সংগঠনের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান। এমন গুরুতর অভিযোগে ২৬ জুন বুধবার রাতে নিউইয়র্ক সিটির জ্যাকসন হাইটসে পালকি পার্টি সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলন হয়। আয়োজন করে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী পরিবারের লোকজন। এ সময় লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন সংগঠনের দফতর সম্পাদক মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী। সংবাদ সম্মেলনের প্রেক্ষাপট উপস্থাপন করেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের অন্যতম সদস্য ড. প্রদীপ রঞ্জন কর।
লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করা হয়, ‘দলে অনুপ্রবেশকারি ও সুবিধাবাদী সিদ্দিকুর রহমান ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন এ দলের সমস্ত নিয়ম-কানুন, গঠনতন্ত্র ও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নির্দেশনা উপেক্ষা করে নিজের স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য এবং দলের নেতা-কর্মীদের প্রলোভন দেখিয়ে যা ইচ্ছা তাই করে চলছেন। কোন নিয়ম-কানুন ব্যতিত দলের অনেককে পদের লোভ দেখিয়ে নিজের অপকর্ম ঢাকার চেষ্টা করছেন।’ প্রশ্নোত্তর পর্বে জানানো হয়, শুণ্য স্থান পূরণের নামে সহ-সভাপতি-৯, যুগ্ম সম্পাদক-৪, সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়েছে ১৮ জনকে। সম্পাদকমন্ডলীতে নেয়া হয়েছে আরো ৫/৭ জনকে। এ সময় নির্বাহী সদস্য শরিফ কামরুল হিরা জানান, আমাকে সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়েছে না জানিয়ে। আবার অনেককে টোপ দেয়া হয়েছে পদের।
ড. প্রদীপ কর অভিযোগ করেন, ছাত্রশিবির, জাগোদলের লোকজনকেও কমিটিতে নেয়া হয়েছে নিজের স্বার্থে। বাণিজ্য সম্পাদক মিসবাহ আহমেদ, শিক্ষা সম্পাদক এম এ করিম জাহাঙ্গির অভিযোগ করেন, ‘আওয়ামী লীগের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান নিজের অসাংগঠনিক কর্মকান্ড অব্যাহত রাখার মতলবে যুক্তরাষ্ট্র যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা লীগ, নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগে বিবাদ লাগিয়েছেন। বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য কমিটি গঠনের নামে চাঁদাবাজি করা হচ্ছে।
ড. প্রদীপ কর এ সময় জানান, গতমাসে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপ নিউইয়র্ক সফরকালে এক সমাবেশে জানিয়েছেন যে, সামনের সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগদানকালে সভাপতি শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সম্মেলন ও নতুৃন কমিটি হবে। কারণ, বর্তমান কমিটি ইতিমধ্যেই ৮ বছর অতিবাহিত করেছে। এমনি অবস্থায় ৮১ সদস্যের কমিটিকে ১৩০ সদস্যে বর্দ্ধিত করার কোন প্রয়োজন ছিল না।
প্রদীপ কর জানান, জননেত্রী শেখ হাসিনাকে নিউইয়র্কে বিপুল সংবর্ধনার প্রস্তুতি চলছে। এছাড়া জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের জন্মশত বার্ষিকী উদযাপন করা হবে ইউনিয়ন স্কোয়ারে। সে প্রস্তুতিও চলছে। সেপ্টেম্বরে সভাপতির উপস্থিতিতে নতুন কমিটি গঠিত হবে। তারাই বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকী বিপুল উৎসাহে করবেন। তিনি উল্লেখ করেন, সিদ্দিকুর রহমানের অন্যায়-অপকর্মের বিস্তারিত তথ্য হাই কমান্ডকে অবহিত করা হয়েছে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের মত একটি সংগঠনকে ব্যক্তি বিশেষের মতলববাজির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে কেউই পছন্দ করেন না।
সংবাদ সম্মেলনে নেতৃবৃন্দের মধ্যে আরো ছিলেন উপদেষ্টা হাকিকুল ইসলাম খোকন, শিল্প সম্পাদক ফরিদ আলম, আইন সম্পাদক এডভোকেট শাহ বখতিয়ার, কায়কোবাদ খান, জালালউদ্দিন জলিল, হেলাল মাহমুদ, জগলুল ইসলাম, ইলিয়ার রহমান, মাশুক আহমেদ, মিজানুর রহমান, শফিকুল ইসলাম, যুবলীগের জামাল আহমেদ, সেবুল মিয়া প্রমুখ।