আপনারা যথেষ্ট বেয়াদবি করেছেন : গ্রিন লাইনের আইনজীবীকে হাইকোর্ট

275

ঢাকা: বাসচাপায় পা হারানো রাসেল সরকারকে ক্ষতিপূরণ দেয়া নিয়ে গ্রিন লাইন পরিবহন কর্তৃপক্ষ গড়িমসি করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে হাইকোর্ট। কোম্পানিটি এ বিষয়ে যথেষ্ট বেয়াদবি করেছে বলে মন্তব্য আদালতের। খবর ইউএনবি’র।

সেই সাথে আদালত রাসেলকে ক্ষতিপূরণের বাকি ৪৫ লাখ টাকা প্রতি মাসে পাঁচ লাখ করে কিস্তিতে মোট ৯ মাসে পরিশোধ করতে গ্রিন লাইনকে নির্দেশ দিয়েছে। প্রতি মাসের ৭ তারিখের মধ্যে ওই অর্থ রাসেলকে দিয়ে ১৫ তারিখের মধ্যে আদালতে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

ক্ষতিপূরণের টাকা কমানো ও কিস্তিতে তা পরিশোধে গ্রিন লাইনের করা আবেদনের শুনানি নিয়ে মঙ্গলবার বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কেএম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেয়।

শুনানিকালে গ্রিন লাইনের আইনজীবীকে আদালত বলে, ‘ক্ষতিপূরণের অর্থ হ্রাস করার কোনো সুযোগ নেই। কিস্তিতে অর্থ পরিশোধ করতে হবে। আদালতের আদেশ লঙ্ঘন করার কোনো ফন্দিফিকির করা হলে আপনাদের সরকার কীভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করে, তা আমরা দেখব। আপনারা যথেষ্ট বেয়াদবি করেছেন। আপনাদের আচরণ কোনোভাবেই শোভনীয় নয়।’

এর আগে ক্রাচে ভর দিয়ে স্ত্রী-সন্তানকে সাথে নিয়ে আদালতে উপস্থিত হন রাসেল সরকার।

আদালতে গ্রিন লাইনের মালিকের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মো. ওজি উল্লাহ। রিট আবেদনকারীর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খোন্দকার শামসুল হক রেজা। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এবিএম আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল এম সাইফুল আলম। বিআরটিএর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ রাফিউল ইসলাম।

রাসেল সরকার (২৩) ভাড়ায় চালিত প্রাইভেট কারের চালক ছিলেন। গত বছরের ২৮ এপ্রিল রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের ধোলাইপাড় এলাকায় গ্রিন লাইন পরিবহনের একটি বাস তার গাড়িকে ধাক্কা দেয়। এ নিয়ে বাসের চালক ও রাসেলের মধ্যে কথা-কাটাকাটি শুরু হয়। এক পর্যায়ে চালক কবির হোসেন বাস চালানো শুরু করলে রাসেল সরতে গিয়ে ফ্লাইওভারের রেলিংয়ে আটকা পড়েন। তার পায়ের ওপর দিয়েই বাস চলে যায়। পরে পথচারীরা রাসেলকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।

খবর পেয়ে পুলিশ জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে গাড়িসহ চালক কবিরকে আটক করে। অন্যদিকে, রাসেলকে বাঁচাতে একটি পা কেটে ফেলতে বাধ্য হন চিকিৎসকরা।

এ ঘটনায় রাসেলের জন্য ক্ষতিপূরণ চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন সংরক্ষিত আসনের তৎকালীন সংসদ সদস্য আইনজীবী উম্মে কুলসুম স্মৃতি। রিটের চূড়ান্ত শুনানি করে গত ১২ মার্চ হাইকোর্ট রাসেলকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার নির্দেশ দেয়। এ আদেশের বিরুদ্ধে পরিবহন কর্তৃপক্ষ আপিল বিভাগে গেলেও তাদের আবেদন খারিজ হয়ে যায়।

গত ১০ এপ্রিল রাসেলকে ক্ষতিপূরণ বাবদ পাঁচ লাখ টাকার চেক দেয় গ্রিন লাইন পরিবহন কোম্পানি। সেই সাথে কোম্পানির সময় আবেদন মঞ্জুর করে বাকি ৪৫ লাখ টাকা ৩০ দিনের মধ্যে দিতে নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। এছাড়া দেশের মধ্যে যেখানে কৃত্রিম পা সংযোজনসহ ভালো চিকিৎসা হয় সেখানে রাসেলের চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে বলা হয়। কিন্তু বাকি টাকা আর পরিশোধ করেনি গ্রিন লাইন।

Leave A Reply

Your email address will not be published.