যুক্তরাষ্ট্রে মেহেদি উৎসবে বাঙালির ঈদ-আনন্দ
নিউইয়র্ক থেকে : চাঁদ দেখার সংবাদ জানার পরই ৩ জুন সোমবার অপরাহ্নে পাল্টে যায় জ্যাকসন হাইটসের চেহারা। বাংলাদেশী তথা দক্ষিণ এশিয়ান তরুণীরা টেবিল-চেয়ার নিয়ে পুরো এলাকা দখলে নেন। পথচারিদের পথ আগলে না রেখে অত্যন্ত কৌশলে বেআইনী এ কাজটি করা হলেও সিটি কিংবা পুলিশ প্রশাসন কাউকে বাধা দেয়নি। কারণ, এটি হচ্ছে মুসলিম-বাঙালি সম্প্রদায়ের ধর্মীয় উৎসবের সামিল। মেহেদি রাঙানোর উৎসব। এ উৎসবে তরুনীরা কারিগর হলেও খদ্দের ছিলেন সকল বয়েসী নারী।
কোন কোন তরুণ-যুবককেও হাতে মেহেদী লাগাতে দেখা যায়। আর এভাবেই মধ্যরাত অবধি হাজার হাজার নারী-পুরুষের পদচারণায় মুখরিত থাকে নিউইয়র্ক সিটির জ্যাকসন হাইটসের মত জ্যামাইকা, ব্রঙ্কস এবং ব্রুকলীনের বাংলাদেশী অধ্যুষিত এলাকাগুলো। কোন কোন স্থানে মেহেদির আমেজে আনুষ্ঠানিক নৃত্য-গীতের আয়োজনও করা হয়। অর্থাৎ এটিকেও ঈদের আগের রাত তথা চাঁদ রাতের অন্যতম একটি অবলম্বনে পরিণত করা হচ্ছে। আর এ উৎসবের মধ্য দিয়ে প্রাণে প্রাণে মিশে যাওয়া বাঙালিরা মেহেদি-কারিগরদের বড় একটি আয়ের উৎস হিসেবেও পরিণত হচ্ছেন।
আধ ঘন্টার কম সময়ে ৩০ থেকে ৫০ ডলার করে আয় হয় একেক খদ্দেরের কাছে থেকে। ৭/৮ ঘন্টায় কেউ কেউ ৫০০ ডলারের অধিক আয় করেছেন বলে জানা গেছে। আনন্দ-হাসি আর তামশার মধ্যে ঈদের আমেজকে নিবিড় করার এ কার্যক্রমে প্রবীনরাও এগিয়ে এসেছেন। হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতির ফল্গুধারা এভাবেই বিকশিত এবং উজ্জীবিত হচ্ছে বহুজাতিক এ সমাজে।
বলার অপেক্ষা রাখে না যে, ৪/৫ বছর আগে চাঁদরাতের এমন আয়োজন বিশেষ কটি সিটিতে হলেও এখন তা বাংলাদেশী এবং দক্ষিণ এশিয়ান জনপদের প্রতিটি সিটিতেই হচ্ছে। ঈদের দিন ঈদ জামাত ঘিরে যে ধরনের উচ্ছ্বাস-আনন্দের ঢেউ খেলা করে-একই ধরনের একটি নির্মল-বর্ণিল আর উচ্ছ্বাসে ভরে উঠছে বাঙালির জীবন। প্রবাস-প্রজন্ম এভাবেই ঈদ-আনন্দে নয়া উদ্যম পাচ্ছে। হারিয়ে যাচ্ছে অনাবিল এক মধুর রাজ্যে-যা প্রত্যক্ষ না করলে অনুধাবন করা সহজ নয়। এর আগের ২৮ দিন সন্ধ্যার প্রাক্কালে ইফতার-আয়োজনে মেতে থাকা জ্যাকসন হাইটসসহ বাংলাদেশী রেস্টুরেন্ট পাড়াগুলোর চেহারায় মেহেদি উৎসব যেন ভিন্ন এক আমেজে তৈরী করে। আর এমন আমেজেই অসাম্প্রদায়িক চেতনার মধ্যে মিশে যাচ্ছেন ঈদ-পাগল বাঙালিরা। এমন অনুভ’তির সাথে সহমর্মিতা প্রকাশ করছে সিটির পুলিশ প্রশাসনও।