প্রতারণায় আড়ং, জরিমানা করে বদলি হওয়া কর্মকর্তার পক্ষে অবস্থান ক্রেতাদের
ঢাকা: জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ারকে সড়ক ও জনপদ অধিদফতর খুলনা জোনে বদলি করা হয়েছে।গতকাল দামের ট্যাগে বিকৃতি ঘটিয়ে অতিরিক্ত দাম আদায়ের ঘটনায় আড়ং-এর উত্তরার আউটলেটকে সাড়ে চার লাখ টাকা জরিমানা করার পাশাপাশি আউটলেট বন্ধ রাখতে বলার ২৪ ঘণ্টা না পেরোতেই তার এই বদলির আদেশ হয়।মঙ্গলবার (৪ মে) তার নিজের ফেসবুক পেজে বদলির পোষ্ট দেয়ার পর মুহূর্তেই তা ভাইরাল হয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।সেখানে ব্যবহারকারীরা সামাজিকভাবে আড়ংকে বয়কটের ডাক দেন এবং হ্যাশট্যাগ ‘#বয়কট_আড়ং’ ব্যবহার করেন। অনেকে নিজে না কেনার পাশাপাশি অন্যদের আড়ং পণ্য না কেনারও আহ্বান জানান।সাইফুদ্দিন আহমেদ নান্নু নামে একজন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘এই বদলি নয়, এ কয় মাস যে তিনি এ পদে টিকে ছিলেন সেটাই বিস্ময়কর!
যারা ভাবছেন আড়ং কে জরিমানা করায়,আড়ং তার ক্ষমতা খাঁটিয়ে এই কর্মকর্তাকে বদলি করিয়েছে,তারা শিশুর মত সরল মানুষ।
কেবল আড়ং নয়,গত কয়েক মাসে তিনি অনেক বড় বড় জায়গায় হাত দিয়ে ফেলেছিলেন ।সেই জায়গাগুলোর সরাসরি মালিক এবং মালিকদের কাছ থেকে সুবিধা ভোগকারী সিণ্ডিকেট মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহরিয়ারকে উটকো ঝামেলা, গলার কাঁটা হিসেবে মার্ক করেছে অনেক আগেই।
বড় বড় শপিংমল, চেইনশপ, পার্লার, হসপিটালের কর্ণধারদের সিন্ডিকেট খড়গ হাতে তৈরী হয়েই ছিল । আড়ং-এ হাত দেবার সাথে সাথে সবাই মিলেই এই কোপটা বসিয়েছে।
এ দেশের মাটি,পানি,নদী,বাতাসকে বিষময় করেছে,সড়ককে মৃত্যুফাঁদে পরিণত করেছে,ওষুধ থেকে শুরু করে শিশুখাদ্যে ভেজাল নামের বিষ মিশিয়ে হাজার কোটি টাকার পাহাড় বানিয়েছে মুখ চেনা কিছু ব্যবসায়ী। যাদের শক্তির উৎস কালো টাকা।এরা কালোটাকা দিয়ে ব্যবসার নিয়ন্ত্রন নিয়েছে,রাজনীতির নিয়ন্ত্রক হয়েছে। এদের শিকড় অনেক গভীরে বসে গেছে।
একজন সরকারি কর্মকর্তার সাধ্য কি তাদের ডালপালা ধরে ঝাঁকুনি দেয়!
অসভ্য,লোভী,নীতিহীন লুটেরা পুঁজিপতিদের স্বর্গরাজ্যে একজন সাহসী, মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহরিয়ারকে দায়িত্বপরায়ন নয়,উদ্ধত,বেয়াদব হিসেবেই তারা দেখবে,সেটাইতো স্বাভাবিক।টাকা আর ক্ষমতার সামনে এ কয় মাস যে তিনি টিকে ছিলেন সেটাই বিস্ময়কর, তার বদলিটা বিস্ময়ের নয়।’
সানজিদা আহসান লিখেছেন, ‘একটা ড্রেস কিনি আমার ননদের জন্য ৩২০০ টাকা দিয়ে। ২৮ রোজায় হাজবেন্ডের অফিস থেকে ওই সেম ড্রেস সেম সাইজ দিলো। আমি তো মহা খুশি। পরে ট্যাগে দেখি ৫ হাজার ১০০ টাকা। খুবই অবাক হয়েছিলাম। আজকে আপনার পোস্ট দেখে শিওর হলাম যে, এই কাজ ওরা করে।’
একই পোস্টের কমেন্টসে ক্ষোভ ঝেরেছেন নাজিয়া আহমেদ নামে আরেক ক্রেতা। তিনি লিখেছেন, ‘আড়ং শুধু একটা নাম…। এর কোয়ালিটি এখন ফুল জিরো।…আগে যাও ন্যূনতম কোয়ালিটি থাকতো!’
রায়হান মিল্টন লিখেছেন, ‘৪ হাজার টাকাতে পাঞ্জাবি কিনে ঈদের দিন শুধু পড়েছি। তারপর এক ধোয়াতেই আড়ংয়ের আসল রং বের হয়ে গেছে।’
গত ২৫ মে একজন ক্রেতা উত্তরা আড়ং থেকে একটি পাঞ্জাবি কেনেন ৭১৩ টাকায়। একই পাঞ্জাবি ৩১ মে কিনতে গেলে দাম রাখা হয় ১ হাজার ৩১৫ টাকা। এ চিত্র তুলে ধরে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরে অভিযোগ করেন ওই ভোক্তা। এর পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল উত্তরা আড়ং-এ অভিযান চালিয়ে অভিযোগের সত্যতা পায় সংস্থাটি। এ সময় বেশি দাম রাখার কোনো কারণ জানাতে পারেনি আড়ংয়ের ওই শো-রুমের কর্মকর্তারা।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার জানান, আড়ং একটি ব্র্যান্ড। দেশি ভালো পণ্য বিক্রি করে বলে তাদের প্রতি ক্রেতাদের রয়েছে আস্থা ও সরল বিশ্বাস। এটি পুঁজি করে কৌশলে ক্রেতাদের ঠকাচ্ছে, যা ভোক্তা আইনপরিপন্থী।প্রধানমন্ত্রী যেখানে দুর্নীতির প্রতি জিরো টলারেন্স দেখিয়েছেন সেখানে বদলির মত এমন পদক্ষেপ সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলার জন্য কিনা তা খতিয়ে দেখার আহ্বানও জানান অনেকে।জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মুহাম্মদ আব্দুল লতিফ স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহরিয়ারকে এস্টেট ও আইন কর্মকর্তা হিসেবে সড়ক ও জনপদ অধিদফতরের খুলনা জোনে বদলি করা হয়েছে।প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, আগামী ১৩ জুনের মধ্যে এই কর্মকর্তাকে তার বদলি কর্মস্থলে যোগদান করতে হবে, অন্যথায় আগামী ১৩ জুনের দুপুরে তার বর্তমান কর্মস্থল হতে তাৎক্ষণিক-ভাবে অবমুক্ত (স্ট্যান্ড রিলিজ) মর্মে গণ্য হবেন।