কৃষকের সঙ্গে খাদ্যমন্ত্রীর মসকরা করা নিয়ে হুইপ স্বপনের স্ট্যাটাস ভাইরাল

350

ঢাকা: টাঙ্গাইলে নিজের ধানি জমিতে কৃষকের আগুন দেয়ার ঘটনার বিষয়ে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন জাতীয় সংসদের হুইপ ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন।তার ওই স্ট্যাটাস ইতোমধ্যে ভাইরাল হয়েছে। স্ট্যটাসটি শেয়ার করেছে ১৫০০জন।টাঙ্গাইলে প্রতি মণ ধান বিক্রি হচ্ছে ৫শ’ টাকায়। আর একজন শ্রমিকের দিন মজুরি ৮৫০ টাকা। এতে প্রতি মণ ধানে কৃষককে গুনতে হচ্ছে লোকসান।

গত রোববার (১২ মে) ধানের ন্যায্য মূল্য না পেয়ে টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার পাইকড়া গ্রামের আবদুল মালেক সিকদার নামের এক কৃষক নিজের পাকা ধানে আগুন দিয়ে অভিনব প্রতিবাদ জানান।পরে বুধবার (১৫ মে) এক অনুষ্ঠানে ঘটনাটিকে পরিকল্পিত মন্তব্য করে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, ঘটনাটি এমনই পরিকল্পিত যে সকাল থেকে সেখানে সাংবাদিকেরা গিয়ে বসে ছিলেন। ধানের দাম কম, এ জন্য একজন কৃষক হিসেবে সেই দুঃখ আমারও আছে। কিন্তু তাই বলে কৃষক তার উৎপাদিত ধানে আগুন দেবেন, এটা হতে পারে না। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

খাদ্যমন্ত্রীর এমস বক্তব্যের সমালোচনা করে জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘ক্ষমতা কি মানুষকে অন্ধত্বের দিকে ঠেলে দেয় ? আমার জানা মতে, সুস্থ চোখ অন্ধ হতে সময় লাগে। কিন্তু মাত্র ৪ মাসে ধানের ভাণ্ডার নওগাঁর গাঁও-গেরাম থেকে উঠে আসা খাদ্য মন্ত্রী গাঁয়ের কৃষকদের সঙ্গে তাঁর আত্মিক সম্পর্ক ভুলে গেলেন ! অন্ধ হয়ে গেলেন এসির ঠান্ডা বাতাসে !!

তিনি বলেছেন, সরকারকে বিব্রত করার জন্য না কি কৃষক ষড়যন্ত্র করে পাকা ধানে আগুন দেওয়ানো হয়েছে!!

কৃষককে ধানের মূল্য দিতে পারবেন না, বিনয়ের সঙ্গে সম্মানিত কৃষকদের সীমাবদ্ধতার কথা অবহিত করুন। সমস্যা কোথায় ? অসীম সমস্যার এই দেশে সব কিছু রাতারাতি ঠিক হবে না, একথা বিনয়ের সঙ্গে বললে মানুষ গ্রহণ করবে।

একজন অসহায় কৃষকের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকেও সহ্য করতে পারবেন না ? আপনি তো সামরিক স্বৈরাচারের মন্ত্রী নন। আপনাকে স্মরণ রাখতে হবে, আপনি পরম ধৈর্যশীল, পরমতসহিষ্ণু, উদার গণতান্ত্রিক বিশ্বসেরা রাজনীতিবিদ শেখ হাসিনার সরকারের মন্ত্রী এবং তাঁর সম্মানিত সহকর্মী। উপরন্তু আপনি তেলতেলে আমলা বা ব্যবসায়ী কোটার মন্ত্রী নন। তৃণমূল থেকে কাঁদামাটি গাঁয়ে মাখা রাজনীতিবিদ। ইউনিয়ন চেয়ারম্যান থেকে ধাপে ধাপে ধান আবাদি মানুষের সহযোগিতা, সমর্থনে আজকের পর্যায়ে এসেছেন। অন্ততঃ আপনি কৃষকের সঙ্গে মসকরা করতে পারেন না। আপনি, আমি কৃষকের ভোটে, কৃষকের দয়ায় সংসদে এসেছি।

আগুন দিয়েছে নিজের ক্ষেতে, আপনার পাঞ্জাবিতে দেয়নি। তাতেই সহ্য হচ্ছে না ! শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের অধিকারটুকুও দেবেন না কৃষককে । কৃষক বলে কি তাদের প্রতিবাদ করার অধিকার নেই !! প্রজাতন্ত্রের দায়িত্বশীল পদে থেকে অসহিষ্ণু হওয়া সমীচীন নয়।

কৃষক উৎপাদন করে, ন্যায্য মূল্য পায় না। একথা অন্য রাজনীতিবিদ না জানলেও আপনার, আমার অজানা নয়। ধানের দামের খোঁজ নেন, প্রতি মুহূর্তে নিজের ম্যাকানিজম দিয়ে খবর নেন। অফিসারদের উপর শতভগ নির্ভরশীল থাকবেন না। দেখেন, হাটে বাজারে ধানের প্রকৃত দাম কত ? আপনি এই মন্ত্রনালয়ে নতুন।কথিত আছে, এই মন্ত্রনালয়ে অধীনস্থ খাদ্য বিভাগের শুধু কর্মচারী নয়, অফিসের দেয়ালও না কি ঘুষ চায়। ভুমিমন্ত্রীর মত সচল হোন, দুর্নীতির জঞ্জাল পরিস্কার করুন।

কৃষককে প্রতিপক্ষ ভেবে সময় নষ্ট না করে, বিনয়ের সঙ্গে কৃষককে আর কিছু দিন ধৈর্য ধরতে বলুন। প্রতিবেশী ভারত বা অন্য কোন দেশে ধানের আধুনিক সাইলো বা গুদাম পরিদর্শন করুন। নিজে লেগে থেকে প্রকল্প প্রস্তুত করে একনেকে অনুমোদন করান। দেশে বড় বড় ধানের সাইলো নির্মাণ করুন। বিনা কমিশন বা ঘুষে সরাসরি কৃষকের নিকট থেকে ধান ক্রয়ের ব্যবস্থা করুন। তবেই কৃষক বাঁচবে। কৃষকরত্ন শেখ হাসিনার শ্লোগান, কৃষক বাঁচলে দেশ বাঁচবে।

সরাসরি কৃষক এর আগে খাদ্য মন্ত্রী হয় নাই। মহান প্রধানমন্ত্রী শখ করে কৃষককে খাদ্য মন্ত্রী এবং কৃষিবিদকে কৃষি মন্ত্রী বানিয়েছেন। আমরা, আপনাদের নিয়ে স্বপ্ন দেখি, আস্থা রাখি, বিশ্বাস রাখি। আপনি এবং কৃষিমন্ত্রী একত্রে বসে কৃষকদের কল্যাণে বড় কিছু করুন, তাদের বাঁচান।

জাতির পিতার আত্মা শান্তি পাবে।’

Leave A Reply

Your email address will not be published.