বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের বাণিজ্যিক যাত্রা

332

ঢাকা: আগামীকাল রবিবার পূর্ণ হচ্ছে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর এক বছর। ২০১৮ সালের ১১ মে রাত ২টা ১৪ মিনিটে স্যাটেলাইটটি যুক্তরাষ্ট্রের কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে উৎক্ষপণ করে মহাকাশ প্রযুক্তি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান স্পেস এক্স। সে হিসেবে ১২ মে এর বর্ষপূর্তি। এই এক বছরে স্যাটেলাইট উৎক্ষপণে কী পেল বাংলাদেশ? বাণিজ্যিক যাত্রা কতটুকু সফল হয়েছে? এমন প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেডের (বিসিএসসিএল) চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ বলেন, ‘আসলে স্যাটেলাইটের এক বছর হলেও আমরা বুঝে পেয়েছি গত নভেম্বরে। এর আগে এটি ছিল ফ্রান্সের থ্যালাস এলিনিয়া স্পেসের নিয়ন্ত্রণে। তারা গাজীপুরে গ্রাউন্ড স্টেশনে আমাদের ঢুকতেই দেয়নি। আমরা পুরো নিয়ন্ত্রণ হাতে পাওয়ার পর বেশ কিছু চুক্তি এরই মধ্যে করেছি।’

জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর বাণিজ্যিক যাত্রার শুরুতেই বাংলাদেশের সবগুলো টিভি চ্যানেল এই স্যাটেলাইট থেকে সেবা নেওয়ার ব্যাপারে চুক্তি করেছে। বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে চুক্তির কাগজ নেবেন টিভি চ্যানেল মালিকরা। ১২ মে বর্ষপূর্তি হলেও প্রধানমন্ত্রী দেশে না থাকায় এটা পিছিয়ে ১৯ মে অনুষ্ঠান করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

ড. শাহজাহান মাহমুদ জানান, ওই দিন দেশের সবগুলো টিভি চ্যানেল বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সমপ্রচার কার্যক্রম শুরু করবে। এ ব্যাপারে প্রস্তুতি চূড়ান্ত হয়েছে। টিভি চ্যানেলগুলো আগে যে দামে ব্যান্ডউইথ কিনত এখন সেই দামই দেবে। প্রতি মেগাহার্ডজ দুই হাজার ডলার করেই পরিশোধ করবে তারা। প্রতিটি টিভি চ্যানেলের ৪ থেকে ৬ মেগাহার্ডজ লাগে। তাদের কাছ থেকে ৮ থেকে ১২ হাজার ডলার করে পাওয়া যাবে।

এছাড়া ব্যাংকের এটিএম বুথ আর অনলাইনে অর্থ লেনদেন বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর আওতায় আনতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আগামী ১৯ মে বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানের দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে ডাচ বাংলা ব্যাংকের একটি বুথ এই স্যাটেলাইটের ব্যান্ডউইথ ব্যবহার করে পরীক্ষামূলকভাবে চালানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে এর পরীক্ষামূলক কাজও শেষ হয়েছে। এরপর পর্যায়ক্রমে সবগুলো এটিএম বুথ কোনো ধরনের ব্রডব্যান্ড সংযোগ ছাড়াই এই স্যাটেলাইটের আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছেন ড. শাহজাহান মাহমুদ। তিনি বলেন, এতে সাইবার অপরাধ কমে যাবে।

বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের বহুমুখী ব্যবহারের উপর কয়েকটি প্রদর্শনীও করা হবে। এর মধ্যে রয়েছে, অনলাইন ব্যাংকিং লেনদেনে সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা, সব টিভি চ্যানেলকে স্যাটেলাইটের আওতায় আনা, ভাসানচরে (যেখানে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের কথা রয়েছে) ইন্টারনেট সেবা, স্যাটেলাইট থেকে কেবল টিভি দেখার সেবা ‘ডাইরেক্ট টু হোম’ বা ডিটিএইচ সেবা প্রভৃতি।

ড. শাহজাহান মাহমুদ আরো বলেন, ফিলিপাইন ও নেপাল এরই মধ্যে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট থেকে ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ কেনার ব্যাপারেও আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এছাড়া বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে দেশের দুর্গম অঞ্চলে ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবস্থা চালু সহজ হবে। সে উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। হাতিয়ায় পরীক্ষামূলক ইন্টারনেট সেবা দেওয়া হয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় ভাসানচরে ইন্টারনেট যোগাযোগসহ ইন্টারনেটভিত্তিক কয়েকটি জরুরি সেবা নিশ্চিত করা হবে। এর মধ্যে আছে, টেলি মেডিসিন এবং টেলি এডুকেশন সেবা। ঢাকায় বসেই একজন বিশেষজ্ঞ চিকিত্সক ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের নিয়মিত চিকিত্সা সেবা দিতে পারবেন। একইভাবে ঢাকা থেকেই রোহিঙ্গাদের জন্য শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনাও সম্ভব হবে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.