জাতিসংঘ শান্তিরক্ষীদের প্রশিক্ষণে ত্রি-পক্ষীয় সহযোগিতার কথা বললেন রাষ্ট্রদূত মাসুদ
নিউইয়র্ক থেকে: জাতিসংঘ শান্তিরক্ষীদের ব্যাপকভিত্তিক প্রশিক্ষণ অর্জনে জাতিসংঘ সদরদপ্তর, সদস্য রাষ্ট্রসমূহ ও শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশসমূহের মধ্যে সুদৃঢ় ত্রি-পক্ষীয় সহযোগিতা বিনির্মাণের উপর জোর দিলেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন। নিরাপত্তা পরিষদে গত মঙ্গলবার ‘শান্তিরক্ষীদের প্রশিক্ষণ ও সক্ষমতা বিনির্মাণ’ শীর্ষক উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে রাষ্ট্রদূত মাসুদ আরও বলেন, শান্তিরক্ষীগণ বহুমূখী ও জটিল রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক পরিবেশে কাজ করে থাকেন, আর এজন্যই এই ব্যাপকভিত্তিক প্রশিক্ষণ ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন। শান্তিরক্ষীদের প্রশিক্ষণ ও সক্ষমতা বিনির্মাণের এই আলোচনায় স্থায়ী প্রতিনিধি তিনটি বিষয়ের অবতারণা করেন। এগুলো হলো: ১) প্রশিক্ষণের অগ্রাধিকারসমূহ, ২) অংশীদারিত্ব এবং ৩) অনুশীলন।
প্রশিক্ষণের অগ্রাধিকার বিষয়ে রাষ্ট্রদূত মাসুদ বাংলাদেশের অগ্রাধিকারসমূহ বিশেষ করে যৌন সহিংসতা ও এর অপব্যবহার রোধে শান্তিরক্ষীদের পদায়নপূর্বক প্রশিক্ষণ প্রদানের কথা উল্লেখ করেন। এছাড়া এ বিষয়ে তিনি বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস সাপোর্ট অপারেশন এন্ড ট্রেনিং (বিপসট) এর অধীনে গৃহীত বিভিন্ন প্রশিক্ষণ যেমন ‘পোটেনশিয়াল অবজারভার এন্ড স্টাফ অফিসার্স কোর্স’, ‘ওয়ারেন্ট অফিসার এন্ড নন-কমিশন্ড অফিসার্স পিস সাপোর্ট অপারেশন কোর্স’, ‘কন্টিনজেন্ট মেম্বার কোর্স’, ‘ইমপ্রোভাইজড্ এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি)’ এবং আধুনিক সরঞ্জামাদি ব্যবহার বিষয়ক প্রশিক্ষণের কথা উল্লেখ করেন। এই কোর্সসমূহ ‘জাতিসংঘের সুনির্দিষ্ট প্রশিক্ষণ কারিকুলাম’ অনুসরণ করে প্রস্তুত করা হয় এবং জাতিসংঘের পিস কিপিং অপারেশন বিভাগের ‘সমন্বিত প্রশিক্ষণ সার্ভিস’ এর সর্বশেষ নীতি ও দিক-নির্দেশনা অনুযায়ী নিয়মিতভাবে হালনাগাদ করা হয়।অংশীদারিত্ব বিষয়ে রাষ্ট্রদূত মাসুদ বাংলাদেশের সাথে জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্রের প্যাসিফিক কমান্ড ও জাতিসংঘের পিস কিপিং অপারেশন বিভাগের সাথে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে গৃহীত ও গৃহীতব্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণের উদাহরণ দেন; যেমন : প্রশিক্ষকদের জন্য আইইডি প্রশিক্ষণ, অপারেশনাল প্রস্তুতি অর্জন বিষয়ক সেমিনার এবং আগামীতে অনুষ্ঠিতব্য ‘বেসামরিক কর্মীদের ব্যাপকভিত্তিক সুরক্ষা’ বিষয়ক কোর্স।
অনুশীলনের ক্ষেত্রে স্থায়ী প্রতিনিধি জাতিসংঘের অন্যান্য মিশনের অভিজ্ঞতা ও অনুশীলনসমূহ এবং মিশনসমূহের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সুপারিশমালা গ্রহণের উপর জোর দেন- যাতে মানবাধিকার, শান্তিরক্ষী ও বেসামরিক কর্মীদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা এবং লিঙ্গ-ভিত্তিক সহিংসতা বিষয়ক প্রশিক্ষণে বাস্তবভিত্তিক বিষয়গুলোকে আমলে নেওয়া যায়।
যৌন সহিংসতা ও এর অপব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জিরো-টলারেন্স নীতির কথা উল্লেখ করেন রাষ্ট্রদূত মাসুদ। শান্তিরক্ষী সৃষ্ট যে কোনো ধরণের যৌন অপব্যবহার ও সহিংসতার বিরুদ্ধে জাতিসংঘ মহাসচিবের জিরো টলারেন্স নীতির প্রতিও তিনি বাংলাদেশের পূর্ণ সমর্থনের কথা পুনরুল্লেখ করেন। এছাড়া বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শান্তিরক্ষী সৃষ্ট যৌন অপব্যবহার ও সহিংসতা প্রতিরোধে গঠিত ‘সার্কেল অব লিডারশীপ’ এর একজন সদস্য মর্মেও উল্লেখ করেন তিনি।
জাতিসংঘ মহাসচিবের শান্তি ও নিরাপত্তা সংস্কার পদক্ষেপ, অ্যাকশন অন পিসকিপিং এজেন্ডা, জাতিসংঘের পিস অপারেশন বিভাগের লিঙ্গসমতা কৌশল ও নিরাপত্তা পরিষদের প্রতিশ্রুতিসমূহের প্রতি বাংলাদেশের সুদৃঢ় সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন রাষ্ট্রদূত মাসুদ।
স্থায়ী প্রতিনিধি বাংলাদেশী শান্তিরক্ষীদের নানা সাফল্যগাঁথা তুলে ধরেন এবং জাতিসংঘে প্রদত্ত প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবে বাংলাদেশ শান্তিরক্ষা মিশনসমূহে নারী শান্তিরক্ষীর পদায়ন ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি করছে মর্মেও উল্লেখ করেন। উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে নারী শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশসমূহের মধ্যে বাংলাদেশ ৫ম স্থান অধিকার করেছে।
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের চলতি মে মাসের সভাপতি ইন্দোনেশিয়া এই উন্মুক্ত আলোচনার আয়োজন করে যেখানে উদ্বোধনী ভাষণ দেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেজ। জাতিসংঘ মহাসচিব তার ভাষণে ব্যাপকভিত্তিক প্রশিক্ষণ ও প্রশিক্ষণ সংশ্লিষ্ট ম্যান্ডেটগুলোর উন্নয়ন ও শক্তিশালীকরণের উপর জোর দেন। নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরাষ্ট্রসহ ৬০টিরও বেশি দেশ এই উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নেয়।