ওসি’কে বাঁচাতে এসপি’র চিঠি, নুসরাতের পরিবারকেই দোষারোপ

374

নিউজ ডেস্ক: ফেনী সোনাগাজী থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) বাঁচাতে নিহত মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহানের পরিবারকে দোষারোপ করে পুলিশ সদর দপ্তরে চিঠি দিয়েছেন ফেনী জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) জাহাঙ্গীর আলম। ১১ এপ্রিল পুলিশ সদর দপ্তর, বিশেষ শাখা ও চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজির দপ্তরে পাঠানো ওই প্রতিবেদনে অভিযোগ করা হয়েছে, নুসরাতকে পুড়িয়ে মারার ঘটনায় মামলা করতে পরিবার ‘কালক্ষেপণ’ করেছে।

পুলিশ সদর দপ্তরের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, পুলিশ সুপারের ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ঘটনার দিন নুসরাত মাদ্রাসায় যান। এরপর তাঁর বসার স্থানে ফাইলপত্র রেখে সাইক্লোন শেল্টারের ছাদের ওপরে বাথরুমের কাছে যান। কিছুক্ষণ পর গায়ে আগুন লাগা অবস্থায় সিঁড়ি দিয়ে চিৎকার করতে করতে নেমে আসেন। তখন কেন্দ্রে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্য ও মাদ্রাসার কর্মচারীরা আগুন নিভিয়ে ফেলেন। ঘটনার পর পুলিশের পক্ষ থেকে পরিবারকে বারবার অনুরোধ করা হলেও তারা মামলা করতে কালক্ষেপণ করে। পুলিশ নুসরাতের চাচাকে বাদী করে মামলা করতে গেলে নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান আপত্তি জানান। তিনি দুবার এজাহার বদল করেন।

নুসরাতের পরিবারের সদস্যরা জানান, ঘটনাটি এমনভাবে বলা হয়েছে যাতে মনে হচ্ছে, নুসরাত নিজের ইচ্ছাতেই ভবনের ওপরে যান। অথচ তাঁকে পরিকল্পনা করে ডেকে নেওয়া হয়। এরপর হাত–পা বেঁধে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার কোনো কথাই উল্লেখ করা হয়নি।

মূলত ওসিকে রক্ষায় এসপি চিঠি দিয়েছেন উল্লেখ করে নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান বলেন, ২৭ মার্চ মাদ্রাসার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে মামলা করার পর থেকে ওসি বলে আসছেন, শ্লীলতাহানির অভিযোগ সাজানো। এমনকি ৬ এপ্রিল তাঁর বোনকে হত্যাচেষ্টার ঘণ্টা দেড়েক আগেও মাদ্রাসার ইংরেজির প্রভাষক আফছারউদ্দীন মামলা তুলে নিতে চাপ দেন। হত্যাচেষ্টার ৩০ ঘণ্টা পর ওসি একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলকে বলেছেন, এটা হত্যাচেষ্টা না আত্মহত্যার চেষ্টা, তা তদন্ত করে দেখতে হবে। সর্বশেষ ৮ এপ্রিল তিনি যে মামলা সাজিয়ে পাঠিয়েছেন, সেখানেও পুলিশ তথ্য গোপনের চেষ্টা করেছে। পরিবারের দাবির মুখে শেষ পর্যন্ত মামলার এজাহার বদলানো হয়েছে।

মাহমুদুল হাসান বলেন, ৬ এপ্রিল রাতে সোনাগাজীর পুলিশ ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন নুসরাতের সাক্ষাৎকার নিয়ে পরিবারকে পড়ে শোনান। কিন্তু এজাহারে দেখা যায় ঘটনাস্থল লেখা হয়েছে ভুলভাবে। মেয়েটিকে হাত-পা বেঁধে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার প্রসঙ্গ আসেনি। কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ আসামির নামও বাদ দেওয়া হয়।

এদিকে পুড়িয়ে মারার ঘটনায় পুলিশের দায়দায়িত্ব খতিয়ে দেখতে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে পুলিশ সদর দপ্তর। আজ বুধবার এই কমিটির প্রথম বৈঠক হওয়ার কথা। তবে কমিটি কবে প্রতিবেদন জমা দেবে, সে তারিখ এখনও ঠিক হয়নি।

জানতে চাইলে কমিটির প্রধান ও পুলিশ সদর দপ্তরের উপমহাপরিদর্শক (মিডিয়া) রুহুল আমিন বলেন, পুলিশের যা যা করার কথা ছিল, সেটা ঠিকমতো করেছে কি-না, সেটা দেখাই কমিটির উদ্দেশ্য। ফেনীর এসপির অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, সেটা খতিয়ে দেখা হবে। পুলিশ ও নুসরাতের পরিবার দুই পক্ষের সঙ্গেই কথা বলবে কমিটি।

সোনাগাজীর ফাজিল মাদ্রাসার ছাত্রী নুসরাতকে ৬ এপ্রিল হাত–পা বেঁধে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। চার দিন জীবনের সঙ্গে লড়ে ১০ এপ্রিল রাতে তিনি ঢাকা মেডিকেলে মারা যান। এ ঘটনায় করা মামলায় ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে এজাহারভুক্ত আসামি আছেন সাতজন। এজাহারভুক্ত এক আসামি এখনো পলাতক। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) মামলাটি তদন্ত করছে।

তথ্যসূত্র: প্রথম আলো

Leave A Reply

Your email address will not be published.