প্যারোলে মুক্তি নিয়ে বিদেশ যাচ্ছেন না খালেদা জিয়া : বিএনপি
ঢাকা: বাংলাদেশে বিরোধীদল বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া প্যারোলে মুক্তি নিয়ে বিদেশে যাওয়ার কোনো সিদ্ধান্ত দেননি বলে পরিস্কারভাবে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। খবর বিবিসি বাংলার।
মিসেস জিয়ার প্যারোলে মুক্তি নিয়ে বিভিন্ন আলোচনা এবং সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশের পটভূমিতে মি: আলমগীর বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, তাদের দলে এ নিয়ে কোনো আলোচনাই হয়নি।
বিশ্লেষকদের অনেকে বলেছেন, খালেদা জিয়া প্যারোলে মুক্তি নিয়ে বিদেশে গেলে তাঁর এবং বিএনপির রাজনীতির এখানেই সমাপ্তি ঘটবে বলে তারা মনে করেন।
দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়া গত পহেলা এপ্রিল থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তি নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানান আলোচনা চলছিল কিছুদিন ধরে। সংবাদ মাধ্যমেও বিভিন্ন খবর প্রকাশ হচ্ছিল।
কিন্তু এখন বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টার বিএনপি নেত্রী প্যারোলে মুক্তি নিয়ে লন্ডন যাচ্ছেন বলে খবর প্রকাশ করেছে।
পত্রিকাটি তাঁর বিদেশ যাওয়ার দিনক্ষণও উল্লেখ করেছে। এমন খবর প্রকাশের পর বিষয়টি রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার কেন্দ্রে চলে এসেছে।
আর এই আলোচনার মুখে মঙ্গলবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, “আমি খুব পরিস্কার করে বলতে চাই, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কোনো প্যারোলে মুক্তি নিয়ে চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়ার কোনো সিদ্ধান্ত দেননি। তিনি এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। কিন্তু তাঁকে নিয়ে ভিত্তিহীন খবর ছড়ানো হচ্ছে।”
খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য গত পহেলা এপ্রিল যখন খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি করা হয়, এর দু’দিন পরই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান সাংবাদিকদের বলেছিলেন, বিএনপি নেত্রীর পক্ষ থেকে আবেদন করা হলে তাঁর প্যারোলে মুক্তির বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।
আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতাও এনিয়ে বিভিন্ন মন্তব্য করেছিলেন।
বিএনপি প্যারোলে মুক্তির বিরুদ্ধে বক্তব্য তুলে ধরে আসছে।
এরই মাঝে দু’দিন আগে বিএনপি মহাসচিব মি: আলমগীরের নেতৃত্বে দলটির কয়েকজন নেতা হাসপাতালে গিয়ে খালেদা জিয়ার সাথে দেখা করেছেন।
মি: আলমগীর বলছেন, তাদের সাথে সাক্ষাতের সময়ও খালেদা জিয়া প্যারোলে মুক্তির বিষয়ে কোনো আলোচনা করেননি। এরপরও এ নিয়ে বাইরে আলোচনা তাদেরকে বিব্রত করছে বলে তিনি উল্লেখ করেছেন।
“এসব আমরা বাইরে শুনছি। কিন্তু সাক্ষাতের সময় আমরা তাঁর অসুস্থতায় উদ্বিগ্ন তা নিয়ে কথা বলেছি। তিনি প্যারোল নিয়ে আমাদের সাথে কোনো আলোচনা করেননি। সেই ধরণের কোনো সিদ্ধান্তও আমাদেরকে জানাননি।”
বিএনপিতে এনিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা-এই প্রশ্নে বিএনপি মহাসচিব বলেছেন, “দলে এনিয়ে কোনো আলোচনাই হয়নি। এ ধরণের কোনো বিষয় নেই। আসলে খুবই দুর্ভাগ্যজনক, এমন খবর মিডিয়াতে আসছে। এর ভিত্তি কি-আমরা জানিনা। কিন্তু এটা বিব্রতকর অবস্থায় আমাদের ফেলছে।”
তবে খালেদা জিয়ার প্যারোলের ব্যাপারে সংবাদ মাধ্যমের বিভিন্ন খবর নিয়ে বিএনপির মধ্যম সারির এবং তৃণমূলের নেতা কর্মীদের মধ্যে আলোচনা রয়েছে।
তাদের অনেকে মনে করেন, সরকারের দিক থেকে এমন বিষয়গুলো ছড়ানো হতে পারে।
দলটির মধ্যম সারির একজন নেত্রী নিলুফার চৌধুরী বলছিলেন, যেহেতু ৩০শে এপ্রিল সংসদ সদস্যদের শপথ নেয়ার সময় শেষ হয়ে যাবে, সেজন্য বিএনপির নির্বাচিত ৬জনের ওপর একটা চাপ সৃষ্টির জন্য প্যারোলের বিষয় সামনে আনা হতে পারে বলে তিনি মনে করেন।
বিএনপি নেত্রীর বিরুদ্ধে ৩০টির বেশি মামলার মধ্যে দু’টিতে তার সাজা হয়েছে। তবে বেশির ভাগ মামলায় তাঁর জামিন পাওয়া আছে।
বিএনপি নেতাদের অনেকে মনে করেন, সরকারের ইচ্ছা ছাড়া তাদের নেত্রীর মুক্তি সম্ভব নয়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী বলেছেন, প্যারোলে মুক্তি নিলে সেটা বিএনপির জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত হবে না।
“খালেদা জিয়া প্যারোলে গেলে তো উনার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের এখানেই সমাপ্তি ঘটবে। আর বিএনপি সম্পূর্ণভাবে নেতৃত্বহীন হয়ে যাবে। কারণ খালেদা জিয়াই তো বিএনপির জন্য ঐক্যের প্রতীক।”
সরকারের সিনিয়র একাধিক মন্ত্রীর সাথে যোগাযোগ করা হলে এই বিষয়ে তারা কোনো বক্তব্য দিতে চাননি।