সিডনিতে এক টুকরো অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ

344

অস্ট্রেলিয়া: লাল সাদা সবুজের বর্নিল সাজে বাঙালি জাতির হাজার বছরের নবান্ন অনুষ্ঠান পহেলা বৈশাখ পালন করতে সিডনি পরিণত হয়েছিল এক টুকরো বাংলাদেশ। সিডনির ফেয়ারফিল্ড শো গ্রাউন্ডে সিডনি বঙ্গবন্ধু পরিষদ আয়োজিত বৈশাখী মেলা ১৪২৬ অনুষ্ঠিত হয়। সর্বকালের সব চেয়ে বড় মেলা প্রবাসী বাংলাদেশিদের মিলনমেলাতে পরিণত করেছিল। জাঁকজমক এই মেলাতে বৈশাখীর সাজে মুখে মুখোশ লাগিয়ে, মেয়েরা সাদা লাল শাড়ি এবং ছেলেরা পাঞ্জাবি পায়জামা ও ছোটরা রংবেরঙের সাঁজে অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন স্থান থেকে সকাল থেকে প্রবাসী বাংলাদেশিরা আসতে থাকেন ফেয়ারফিল্ড স্ট্রেডিয়ামে। নুসরাত জাহান এবং ছবির উপস্থাপনায় বাংলাদেশ এবং অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে শুরু হয় বৈশাখী মেলার কার্যক্রম। শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক গাউসুল আলাম সাহাজাদা। স্থানীয় শিল্পীদের গান, নাচে মেতে উঠে প্রবাসী বাংলাদেশিরা।

আইনজীবী সিরাজুল হক এর সঞ্চালনায় সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভাতে অংশগ্রহণ করেন মেলার প্রধান অতিথি হাইকমিশনার সুফিউর রহমান। 

তিনি বলেন, আমাদের দুই হাজার বছরের সমৃদ্ধ সংস্কৃতি আছে সেই সংস্কৃতির টানে আজকে আমরা এখানে উপস্থিত হয়েছি। বাংলাদেশি হিসেবে গর্ববোধ করছি, আমাদের হাজার বছরের সংস্কৃতির সাথে অস্ট্রেলিয়াকে পরিচিত করাতে হবে।  

বিশেষ অতিথি অস্ট্রেলিয়ার ছায়ামন্ত্রী টনি বার্ক বলেন, আধুনিক অস্ট্রেলিয়া আজকে যে নতুন নববর্ষ পালন করছে এটা শুধু নববর্ষ না। এই ভাষা একমাত্র ভাষা যে ভাষার জন্য প্রথম সংগ্রাম করেছে, সেই ঐতিহাসিক ভাষার নববর্ষ পালন করতে পেরে আমি আনন্দিত।

অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন ম্যাট থিচুইয়াট এমপি, নিউ সাউথ ওয়ালেস পার্লিয়ামেন্টের জুলি অওনেস এমপি, হিউস ম্যাক্ডর্মেট এমপি , জিহাদ ডিপ এমপি, লিবারেল নেতা ইগনেসিয়াস রোজারিও, বাংলাদেশ বিষয়ক কনসাল জেনারেল মাসুদুল আলাম, কাউন্সিলর সাহা জামান টিটু, কাউন্সিলর মাসুদ চৌধুরী, সুমন সাহা,  প্রাক্তন কাউন্সিলার রাজদত্ত, সুসাই বেঞ্জামিন, ঢাকা উত্তর যুবলীগ সেক্রেটারি ইসমাইল হোসাইন বঙ্গবন্ধু পরিষদ অস্ট্রেলিয়ার সভাপতি ড. রতন কুণ্ডু, বঙ্গবন্ধু পরিষদ সিডনির সভাপতি ​ওয়েস্টার্ন সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. মাসুদুল হক প্রমুখ।

বৈশাখী মেলার প্রধান আকর্ষণ ছিলেন বাংলাদেশ থেকে আগত জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী ফেরদৌস ওয়াহিদ এবং হাবিব ওয়াহিদ।

হাবিব ওয়াহিদের একের পর এক গান গেয়ে মাতিয়ে তোলে জনসমুদ্রকে। সকলে যখন হাবিব এর গানে মত্ত তখন মঞ্চে আসেন ফেরদৌস ওয়াহিদ। বড় ছোট সকলে মেতে উঠে ফেরদৌস উয়াহিদের জনপ্রিয় গানে।

মেলাতে হরেক রকমের খাবারের এবং বাহারি রঙ্গের কাপড়ের দোকানে ছিলো উপচেপড়া ভিড়। বাংলাদেশি খাবারসহ নানান স্বাদের খাবার পেয়ে উচ্ছ্বসিত মেলায় আগত প্রবাসী বাংলাদেশিরা। সিডনিতে নকশী কাঁথার শাড়ি, সালোয়ার কামিজ, ফতুয়া পেয়ে উপচেপড়া ভিড় ছিল স্টলগুলোতে।

সাজেদা টিটু বলেন, মেলাতে এসে আমরা অনেক বেশি আনন্দিত। বাচ্চাদের বাংলাদেশি সংস্কৃতির সাথে পরিচিত করতে পারছি। বাংলাদেশি সকল প্রকার খাবারের স্বাদ নিতে পেরে অনেক আনন্দিত।

মেলাতে স্টল নিয়েছে সানতোনা তিনি বলেন, অনেক বেশি বিক্রি হয়েছে বৈশাখীর শাড়ি। নকশী কাঁথা শাড়ি চাহিদা ছিলো অনেক বেশি। 
প্রায় একশো স্টল ছিল এবারের মেলাতে।

ছোট বাচ্চারা নাগরদোলার স্বাদ না পেলেও অন্য সকল রাইডের স্বাদ নিতে ভুল করেনি। মেলার আহবায়ক গাউসুল আলাম সাহাজাদা বলেন, অস্ট্রেলিয়াতে নিজেদের শত কাজের মাঝেও উপস্থিত হওয়া সকলকে ধন্যবাদ এবং আগামীতে আর বড় অনুষ্ঠান বঙ্গবন্ধু পরিষদের পক্ষ থেকে উপহার দেয়া হবে।

প্রায় পঁচিশ হাজারের মতো মানুষের উপস্থিতিতে সিডনি যেন পরিণত হয়েছিল এক টুকরো অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে। 

Leave A Reply

Your email address will not be published.