আদালতের রায়ে বেকসুর খালাস সেই আসিয়া বিবি

321

আর্ন্তজাতিক ডেস্ক: পাকিস্তানে ধর্ম অবমাননার মামলায় মৃত্যুদণ্ড সাজাপ্রাপ্ত আসিয়া বিবিকে বেকসুর খালাস পাওয়ার রায় বহাল রেখেছে দেশটির সুপ্রিমকোর্ট। আসিয়া বিবির মুক্তির রায়ের বিরুদ্ধে করা পিটিশনের শুনানি শেষে গতকাল মঙ্গলবার এ রায় ঘোষণা করে আদালত। এ রায়ের ফলে আসিয়া বিবি এখন পাকিস্তান ছাড়তে পারবেন বলে আশা করা হচ্ছে। 

এর আগে ২০১০ সালের ডিসেম্বরে নিম্ন আদালতে আসিয়া বিবিকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছিল। ২০০৯ সালে আসিয়া বিবির বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ আনা হয়। ২০১৫ সালে রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেন তিনি। পরে ২০১৮ সালের ৩১ অক্টোবর আসিয়া বিবিকে খালাস দেন সর্বোচ্চ আদালত।পাকিস্তানের বিভিন্ন গণমাধ্যমে জানানো হয়, কারাগার থেকে মুক্তির পর উড়োজাহাজে ওঠেন আসিয়া বিবি। তার গন্তব্য এখনো জানা যায়নি। সুপ্রিম কোর্ট আসিয়াকে বেকসুর খালাস দেওয়ার পর আন্দোলনে ফেটে পড়ে পাকিস্তান। রায় ঘোষণার পর শত শত মানুষ রাওয়ালপিন্ডি ও ইসলামাবাদে রাস্তা অবরোধ করেন। এতে নেতৃত্ব দেয় উগ্র ডানপন্থী তেহরিক-ই-লাব্বাইক পাকিস্তান (টিএলপি)। 

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বৈঠক করেন সেনাপ্রধানের সঙ্গে। তারপর ইমরান খান জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন। কিন্তু এরপরও পাকিস্তান জুড়ে অবস্থান ধর্মঘট পালন করতে থাকে টিএলপি। অবশেষে সরকার টিএলপির সঙ্গে একটি চুক্তি করে।

কে এই আসিয়া বিবি?

তার আসল নাম আসিয়া নওরীন। জন্ম পাকিস্তানের পাঞ্চাব প্রদেশের শেইখুপুরা জেলার ইথান ওয়ালি নামের ছোট্ট একটি গ্রামে। খ্রিস্টান ধর্মের অনুসারী আসিয়া পরিবারের সাহায্যের জন্য শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। তার স্বামী ছিল ইটভাটার শ্রমিক। পাঁচ সন্তানের জননী আসিয়া বিবির পরিবারটিই ছিল ওই গ্রামের একমাত্র খ্রিস্টান পরিবার। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে খবর, কারাগারে যাওয়ার আগে নাকি তাকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণের জন্য চাপ প্রয়োগ করেছিল এলাকাবাসী। 

ঘটনাটি ২০০৯ সালের জুনের। আসিয়া বিবি একদল নারীর সঙ্গে কৃষি জমিতে কাজ করতেন। এসময় এক বালতি পানি নিয়ে দলের অন্য নারীদের সঙ্গে তার ঝগড়া হয়। আসিয়া বিবি বালতি থেকে এক গ্লাস পানি নেন। এ নিয়ে দলের অন্য নারীরা তার সঙ্গে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। আসিয়া বিবি মুসলিম নন, সেজন্য তিনি মুসলিমদের বালতির পানিতে গ্লাস ডুবিয়ে পানি তুলতে পারেন না। ঝগড়ার এক পর্যায়ে হযরত মুহাম্মদ (স.) কে নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য করেন তিনি। এই অভিযোগ ২০১০ সালের ডিসেম্বরে বিচারিক আদালতে তাকে মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি দেওয়া হয়।

এই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে গেলে বছর পর লাহোরের হাইকোর্টও আসিয়ার বিরুদ্ধে সেই রায়কেই বহাল রেখেছিলেন। পরে আসিয়া বিবিকে খালাস দেন দেশটির সর্বোচ্চ আদালত। প্রধান বিচারপতি মিয়া সাকিব নিসার, আসিফ সাইদ খোসা ও মাজহার আলম খান মিয়ানখেল আসিয়া বিবির বিরুদ্ধে ওঠা ধর্ম অবমাননার দায় থেকে তাকে রেহাই দেন। রায় ঘোষণার সময় পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি মিয়া সাকিব নিসার বলেন, মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি ও দোষী সাব্যস্তকরণের বিরুদ্ধে আপিল গৃহীত হয়েছে। 

Leave A Reply

Your email address will not be published.