‘আইনকে নিজস্ব পথে চলতে না দিলে, নির্বাচন আইনানুগ হতে পারে না’
ঢাকা: সবার জন্য আইনের সমান প্রয়োগ না হলে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হতে বাধ্য বলে মন্তব্য করেছেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। তিনি বলেন, একটা কথা বলা হচ্ছে, নির্বাচন আইনানুগ হতে হবে।
এই কথাটা অবশ্যই ব্যাখ্যার অবকাশ রাখে। কারণ আইনকে নিজস্ব পথে চলতে না দিলে, নির্বাচন কখনো আইনানুগ হতে পারে না। সুতরাং যখনই আমরা বলবো নির্বাচন আইনানুগ হতে হবে। তখন তার সাথে এটাও বলতে হবে, আইনকে তার নিজস্ব পথে চলতে দিতে হবে। এটা করার দায়িত্ব আপনাদের (ম্যাজিস্ট্রেটদের)।
আগারগাঁওস্থ নির্বাচন ভবনে রবিবার (২৫ নভেম্বর) সকালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের উদ্দেশ্যে নির্বাচনী আচরণ বিধিমালা সংক্রান্ত ব্রিফিংয়ে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার।
পুরোনো দিনের একটি গল্প উল্লেখ করে মাহবুব তালুকদার বলেন, আফ্রিকান একজন রাজা অভিনব কায়দায় বিচার করতেন। একটা গ্লাসে সরবত, একটাতে বিষ এবং আরেকটাতে পানি রাখা হতো। দোষীরা আসতো।
বিষ পান করলে মারা যেতো। পানি পান করলে অব্যাহতি পেতো। আর সরবত পান করলে পুরস্কৃত হতো। অনেকে তার বিচার ব্যবস্থা নিয়ে সমালোচনা করেছেন। উত্তরে রাজা বলেছিলেন, আমি তো রাজা, বিচারক নই। আমি তো বিচারের আইনকানুন কিছু জানি না। যিনি অপরাধী তার বিচার করেন ভাগ্য বিধাতা। আমি পুরোটাই ভাগ্য বিধাতার হাতে ছেড়ে দিয়েছি। কারণ এই বিচারে তিনিই আসল বিচারক। সেই রাজার বিচার ব্যবস্থা এখন আর নেই। এখন বিচারকরাই বিচার করে থাকেন। বিচারকরাই ভাগ্য বিধাতার প্রতিভূ।
আপনাদের (ম্যাজিস্ট্রেট) দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে বিশেষ কিছু বলার নেই। আপনারা সততা, আন্তরিকতা দিয়ে দায়িত্ব পালন করবেন। আইনের ব্যবহার সবার জন্য সমান হওয়া উচিত।
নিরপেক্ষভাবে আইনের প্রয়োগ না করলে সে আইন, আইন নয়, কালো আইন। সবার জন্য সমানভাবে প্রয়োগ না করলে সে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হতে বাধ্য। আমরা তা কখনো চাই না। সুষ্ঠু নির্বাচনী ব্যবস্থাপনায় ম্যাজিস্ট্রেটদের দায়িত্ব অপরিসীম। শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশের পাশাপাশি ম্যাজিস্ট্রেটদের সমান দায়িত্ব।
যারা নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করবেন তারা যারাই হোক না কেন, তাদের বিরুদ্ধে আপনারা (ম্যাজিস্ট্রেটদের) কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
নির্বাচন কমিশনার হিসেবে আমরা শপথ গ্রহণ করলেও নির্বাচন সংশ্লিষ্টরাও আমাদের নির্বাচনী শপথের অংশীদার। শপথ আমরা গ্রহণ করলেও নির্বাচন আমরা করি না। নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আপনারা (ম্যাজিস্ট্রেট)। আপনাদের মধ্যে শপথ সঞ্চালিত হয়ে যাচ্ছে।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন একটি অংশগ্রহণমূলক, পূর্ণাঙ্গ নির্বাচন হবে। আমরা অত্যন্ত ভাগ্যবান যে, সব রাজনৈতিক দল অংশ নিচ্ছে। সারা জাতি এই নির্বাচন নিয়ে উদ্দীপ্ত, উচ্ছ্বসিত। এই উদ্দীপনাকে নির্বাচনের দিন পর্যন্ত ধরে রাখতে হবে।
নির্বাচন অবশ্যই নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু, অবাধ, গ্রহণযোগ্য হতে হবে। এতে আপনাদের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটদের দায়িত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সেনা বাহিনীও আপনাদের অধীনে দায়িত্ব পালন করবেন। শুধু দেশ নয়, বিশ্ববাসীও আমাদের জাতীয় নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে।
এদিকে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদারের বক্তব্য টেনে ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা বলেন, ‘আপনারা (ম্যাজিস্ট্রেট) বিধাতা বা ভগবানের প্রতিভূ- কথাটি যথার্থ। আল্লাহর আরেক নাম হাকিম। আপনারাও সকলে হাকিম। সুতরাং হাকিমের দায়িত্ব তেমনি নিরপেক্ষভাবে পালন করতে হবে। দাড়িপাল্লার নিক্কিতে মেপে দেখতে হবে। ’
তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচনকালে দায়িত্বপালন করতে হলে নির্বাচনী আইন, বিধি, আরপিসি, আচরণ বিধিসহ সকল সংশ্লিষ্ট আইন ভাল করে পড়াশুনা করতে হবে। পড়াশুনা ও জানার পরিধি আপনাদের বেশি, সুযোগও বেশি। যে কারণে আপনার অজ্ঞ নন বিজ্ঞ, অভিজ্ঞ। সেটা আপনাদের প্রয়োগ করতে হবে। ’
বক্তব্যকালে সিইসি আইনের ৫/৭টা আইনের কমপক্ষে ২০টা ধারা, আচরণ বিধি, দণ্ডবিধি ১৮৬০, ১৪১ ধারা এর উপধারা, পুলিশ আইন ১৮৬১, ম্যাজিস্ট্রেটদের কার্যপ্রনালী বিধি ১৮৯৮, ১২৭ থেকে ১৩১ পর্যন্ত, পিআরবি ভালভাবে পড়াশুনার নির্দেশনা দেন তিনি।
সিইসি বলেন, স্বরাষ্টমন্ত্রণালয় থেকে একটা পরিপত্র দেয়া হয় সেটা গুরুত্বপূর্ণ। সিভিল ওয়ার্ক ভালভাবে আত্মস্থ করতে পারলে বিজ্ঞ ম্যাটিস্ট্রেটের দায়িত্ব পালন করতে পারবেন।
নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীনের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার, মো. রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শাহাদাত হোসেন চৌধুরী (অব.) ও নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের (ইটিআই) মহাপরিচালক মোস্তফা ফারুক।