নয়াপল্টনে তরিকুল ইসলামের জানাজা সম্পন্ন
ঢাকা: বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ, সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলামের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার সকাল ১০টার কিছু পরে নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয় তরিকুল ইসলামকে। পরে দলীয় কার্যালয়ের সামনের রাস্তায় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় বিএনপি, ২০ দলীয় জোট, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী-সমর্থকসহ সর্বস্তরের মানুষ অংশ নেন। জানাজা শেষে দলের পক্ষ থেকে তরিকুলের মরদেহে শেষ শ্রদ্ধা জানান দলীয় নেতাকর্মীরা।
জানাজায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড.খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, ব্যারিস্টার জমির উদ্দীন সরকার, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস-চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী, ব্যারিস্টার শাজাহান ওমর, বরকত উল্লাহ বুলু, মো. শাজাহান, শামসুজ্জামান দুদু, ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, আহমেদ আযম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, হাবিবুর রহমান হাবিব, সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, সহ-দফতর সম্পাদক মুনির হোসেন, তাইফুল ইসলাম টিপু, বেলাল আহমেদ, টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির সভাপতি কৃষিবিদ শামসুল আলম তোফাসহ বিএনপি এবং তার অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়াও ২০ দলীয় জোট নেতা ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, আহসান হাবীব লিংকন, আাব্দুল হালিম জানাজায় অংশ নেন।
এ সময় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইনলাম আলমগীর বলেন, তরিকুল ইসলাম অন্যায়ের সঙ্গে তিনি কখনও আপোষ করেননি। জাতির এ ক্রান্তিলগ্নে, দলের দুঃসময়ে তার চলে যাওয়া জাতির অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেলো। তরিকুল ইসলামের মৃত্যুতে বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদী দলের রাজনীতি থেকে এক নক্ষত্রের বিদায় হলো।
নয়াপল্টন থেকে তরিকুল ইসলাম মরদেহ জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় নেয়া হবে। সেখানে দ্বিতীয় নামাজে জানাজা শেষে মরদেহ নেয়া হবে গ্রামের বাড়ি যশোরে। বিকেলে যশোর ঈদগাহ মাঠে সবশেষ জানাজা শেষে কারবালা কবরস্থানে দাফন করা হবে।
রাজধানীর অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার বিকেলে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তরিকুল ইসলাম। তার বয়স হয়েছিলে ৭৩ বছর। স্ত্রী, দুই ছেলেসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী ও রাজনৈতিক সহচর রেখে গেছেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরে দুরারোগ্য ক্যান্সারসহ ডায়াবেটিস, কিডনি জটিলতা ও হৃদরোগে ভুগছিলেন। তার জীবনাবসানে রাজনৈতিক অঙ্গন ও জন্মস্থান যশোরে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। সোমবার ঢাকাসহ সারাদেশে বিএনপির নেতাকর্মীরা বুকে কালো ব্যাজ ধারণ করে শোক দিবস পালন করছেন। এ ছাড়া দলীয় কার্যালয়ে কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়।
মৃত্যুর খবর পেয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় অ্যাপোলো হাসপাতালে ছুটে যান। এ সময় দলীয় নেতাকর্মীদের কান্নায় ভেঙে পড়তে দেখা যায়। সেখানে তিনি প্রয়াত নেতার স্ত্রী অধ্যাপিকা নার্গিস ইসলাম এবং তার ছেলে সুমিত ও অমিতের সঙ্গে কথা বলেন।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে প্রথম শ্রেণি নিয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন তরিকুল ইসলাম। সমাজতান্ত্রিক আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে ছাত্রজীবনে ছাত্র ইউনিয়ন করতেন। দেশ স্বাধীনের পর মওলানা ভাসানীর দলে থাকা অবস্থায় ১৯৭৮ সালে জিয়াউর রহমানের ডাকে বিএনপিতে যোগ দেন। চারদলীয় জোট সরকারের তথ্য ও পরিবেশমন্ত্রী ছিলেন তিনি। ১৯৯১ সালে খালেদা জিয়ার সরকারেও তিনি প্রথমে সমাজকল্যাণ এবং পরে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী ছিলেন। যশোর পৌরসভার প্রথম নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব, সহসভাপতিসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন তরিকুল ইসলাম। সর্বশেষ ২০০৯ সালে বিএনপির পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিলে তরিকুল ইসলাম দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য হন। দলের দুঃসময়ে সামনে থেকে সহযোগিতা করায় তৃণমূলের নেতাকর্মীদের কাছে তিনি ব্যাপক শ্রদ্ধেয়। যশোর সদর আসন থেকে তিনি চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। নির্বাচন এলাকা ছাড়াও যশোর জেলার উন্নয়নে তার ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে।