উন্নয়ন করতে গিয়ে কোনো মানুষ যেন কষ্ট না পায়, লক্ষ্য রেখেছি: কলাপাড়ায় প্রধানমন্ত্রী

275

নিউজ ডেস্ক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের মানুষ আর কষ্ট করবে না। তাদের জীবনমানের উন্নয়ন হবে।

আমাদের সামাজিক দায়বদ্ধতা আছে। উন্নয়নের কারণে কোনো মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত যেন না হয়, গৃহহীন না হয়ে পড়ে সেদিকে আমরা লক্ষ্য রেখেছি।

শনিবার (২৭ অক্টোবর) পটুয়াখালীতে পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভূমি অধিগ্রহণের কারণে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য আবাসন প্রকল্প স্বপ্নের ঠিকানার দলিল ও চাবি হস্তান্তর অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘এই এলাকায় ১৩০টি পরিবারের জন্য আমরা ঘর তৈরি করে দিয়েছি। এই পরিবারগুলোতে ক্ষতিপূরণ দিয়েছি তো বটেই, ঘরও তৈরি করেছি। যাতে তারা পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাস করতে পারে। ’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘উন্নয়ন করতে গিয়ে কোনো মানুষ যেন কষ্ট না পায়। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা এ ব্যবস্থা নিয়েছি। আমি বাড়িগুলোতে গিয়েছিলাম।

বাড়িগুলো চমৎকার। ১৩০টা সেমি পাকা বাড়ি। এছাড়া এখানে খেলার মাঠ, দুইটা পুকুর, স্কুল, দোকানঘর, কাঁচাবাজার, ৪৮টি ঘর নলকূপেরও ব্যবস্থা করেছি। ’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি নির্দেশ দিয়েছি এখানে মাল্টিপারপাস সাইক্লোন সেন্টার তৈরি করতে। কাজেই স্বপ্নের ঠিকানা নাম দিয়ে যে বাড়িঘর তৈরি করেছি তারা সেখানে সুন্দরভাবে বসবাস করতে পারবেন। ’

পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র হলে এখানকার ছেলে- মেয়েরা চাকরির সুযোগ পাবে। সেই ব্যবস্থা আমরা করতে পারব বলেন শেখ হাসিনা।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘এ অঞ্চলে নৌবাহিনী, বিমানবাহিনীর ঘাঁটি ও সেনানিবাস তৈরি করে দিচ্ছি। এ এলাকা একসময় অবহেলিত ছিল, সেটার দিকে আমরা নজর দিচ্ছি। এই অঞ্চল ঘিরে আমরা আমাদের মহাপরিকল্পনা করেছি। ’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই এলাকায় আমরা একটা দ্বীপ খুঁজছি। এটির সম্ভাব্যতা যাচাই-বাছাই চলছে। আমরা এখানে পরমানু বিদ্যুৎ কেন্দ্র করে দেব। ’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতার জন্মশত বার্ষিকী ২০২০ সালের ১৭ মার্চ। ২০২০-২১ কে আমরা মুজিববর্ষ ঘোষণা দিয়েছি। এই সময়ের মধ্যে বাংলাদেশের মানুষ দারিদ্র্যমুক্ত হবে। ’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রত্যেকটি এলাকায় আমরা ইন্টারনেট সার্ভিস এনে দিয়েছি। আমরা ব্ঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করেছি। কৃষি, তথ্যপ্রযুক্তি সবক্ষেত্রে আমরা এ স্যাটেলাইট ব্যবহার করতে পারব। ’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি চাই এ প্রকল্পগুলোর যেন ভালোভাবে ব্যবহার করা হয়। আমরা গুচ্ছগ্রাম, আশ্রয়ন প্রকল্প নির্মাণ করছি, গৃহায়ন তহবিল থেকে অর্থবরাদ্দ দিচ্ছি। পটুয়াখালী এলাকায় আসতে আগে কোনো ব্রিজ ছিল না। এখন এলাকার সবগুলো ব্রিজই বলতে গেলে আমাদের করা। অভ্যন্তরীণ নৌপথগুলো যেন সচল হয়, ড্রেজিং করে আমরা সে ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। ’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ভাষণের পর ১৬টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ঘোষণা করেন। এরপর দুপুর আড়াইটায় আকাশপথে বরগুনার তালতলীতে যান প্রধানমন্ত্রী। সেখানে বিকাল ৩টায় তালতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আয়োজিত তালতলী সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে বিশাল জনসভায় ভাষণ দেবেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী বরগুনা জেলা পরিদর্শন ও ২১টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন।

উন্নয়ন প্রকল্পগুলো হল বরগুনা সদর হাসপাতাল ৫০ শয্যা থকে ২৫০ শয্যায় উন্নীতকরণ, বরগুনা জেলা গ্রন্থাগার, বরগুনা পুলিশ লাইনের মহিলা ব্যারাক, দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিশুদের হোস্টেল নির্মাণ, ঘূর্ণিঝড়, বরগুনা সদর ইউনিয়ন ভূমি অফিস, ডৌয়াতলা ইউনিয়ন ভূমি অফিস, বুড়িরচর ইউনিয়ন ভূমি অফিস, হোসনাবাদ ইউনিয়ন ভূমি অফিস, সিডর ও আইলায় উপকূলীয় এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ পুনর্বাসন, বরগুনা-বাকেরগঞ্জ-কাঁঠালতলী- পাদ্রীশিবপুর-সুবিদখালী সড়ক, হাজার বিঘা-কামরাবাদ-পুরাকাটা ফেরিঘাট সড়কের চেইনেজ ও আরসিসি গার্ডার ব্রিজ নির্মাণ, বরগুনা সদরের গৌড়িচন্না ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স ভবন, বামনা উপজেলা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন, বেতাগী উপজেলা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন, বেতাগী উপজেলার বদনাখালী খালের ওপর গার্ডার ব্রিজ নির্মাণ, তালতলী উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স ভবন, বামনা উপজেলা পরিষদ ভবন, আমতলী থানা ভবন, আমতলী ইউনুস আলী খান কজেলের ৪র্থ তলা একাডেমি ভবন কাম সাইক্লোন শেল্টার, এম বালিয়াতলী ডিএন কলেজের ৪র্থ তলা একাডেমিক ভবন কাম সাইক্লোন শেল্টার, সৈয়দ ফজলুল হক ডিগ্রি কলেজের ৪র্থ তলা একাডেমিক ভবন কাম সাইক্লোন শেল্টার, তালতলী প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন কেন্দ্র্র, তালতলী ও বামনা উপজেলায় একটি বাড়ি একটি খামার ও পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক ভবন।

এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গমন উপলক্ষে কলাপাড়া ও তালতলী উপজেলাজুড়ে বিরাজ করছে উৎসবমুখর পরিবেশ। রঙিন সাজে সেজেছে তালতলীর অলিগলি ও সভামঞ্চ। ব্যানার ও ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে সভাস্থল থেকে শুরু করে জনসভা মাঠ প্রাঙ্গণ ও উপজেলা শহর। নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।

বরগুনা-১ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগমনে গোটা দক্ষিণাঞ্চল হবে উন্নয়নের রোল মডেল। আর বরগুনা জেলা হবে সেই উন্নয়ন মডেলের প্রবেশদ্বার।

Leave A Reply

Your email address will not be published.