নভেম্বরে ঘূর্ণিঝড়, ডিসেম্বরে ৬ ডিগ্রিতে নামবে তাপমাত্রা

366

ঢাকা: কাগজে-কলমে ঘূর্ণিঝড় তিতলির পরপরই শরৎ বিদায় নিয়েছে। আসছে শীতকাল। তবে এখনো ঘূর্ণিঝড়ের শঙ্কা কাটেনি। শীত মানেই হিমহিম কনকনে ঠাণ্ডার অনুভূতি। ইউরোপ-আমেরিকা বা অন্যান্য শীতপ্রধান দেশগুলোতে শীতকালে বরফ পড়ে। তাপমাত্রা নেমে যায় হিমাঙ্কের অনেক নিচে। আমাদের দেশে বিগত কয়েক বছরে শীতের তীব্রতা বেড়েছে কয়েক গুণ।

শীতের আগমনী বার্তা ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। সাদা মেঘের ভেলা ভাসিয়ে শরৎ বিদায় নিয়েছে সদ্যই। হেমন্তের শিশির বিন্দুতে সাদা কাশফুলের রঙও এখন বিবর্ণ হয়ে আসছে। উত্তুরে বাতাসে শিরশিরে অনুভব। হাওয়ায় কমছে জলীয় বাস্প আর বাড়ছে আর্দ্রতা। গ্রামীণ জনপদে এখন হিম হিম আমেজ। সাঁঝ-প্রভাতে দৃষ্টিসীমা হরন করছে কুয়াশার চাদর। শেষ রাতে গায়ে কাঁথা চাপাতে হচ্ছে। এবার খানিকটা আগেই শীত এসেছে উত্তরের জনপদে। সন্ধ্যার পরপরই কুয়াশা আর হিমেল হাওয়ায় বন্দী হয়ে যাচ্ছে উত্তরাঞ্চলের বিস্তীর্ণ জনপদ। তাপমাত্রা কমছে সারাদেশেই।

আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, নভেম্বরে সারাদেশে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এ সময় ১ থেকে ২টি নিম্নচাপের সৃষ্টি হবে। সেক্ষেত্র এ মাসেই তাপমাত্রা কমতে শুরু করবে ক্রমহ্রাসমান হারে। কিন্তু নিম্নচাপের দু’টির মধ্যে একটির ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক সামছুদ্দিন আহমদ জানিয়েছেন, ডিসেম্বরের পুরো শীতকাল বিরাজ করবে কয়েকটি শৈত্য প্রবাহ নিয়ে। এরমধ্যে একটি মাঝারি ধরনের শৈত্য প্রবাহের ধারণা পাওয়া যাচ্ছে। এক্ষেত্রে ব্যারোমিটারের পারদ নেমে আসতে পারে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরে। এ শৈত্য প্রবাহ বয়ে যাবে দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলের উপর দিয়ে। আর ডিসেম্বরের শেষে দেশের উত্তরাঞ্চল ও নদ-নদী অববাহিকায় শেষরাতে মাঝারি ধরনের ঘন থেকে ঘন কুয়াশা পড়বে।

আবহাওয়াবিদরা বলছেন, সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কাছাকাছি আসা এবং সন্ধ্যায় বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার দুই মাস আগেই উত্তরাঞ্চলে শীত এসে গেছে।

আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা পূর্বাভাস দিয়ে বলছেন, চলমান আবহাওয়ায় পরিবর্তন না এলে এবার শীতের তীব্রতা অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে। ভয়াবহ শীত পড়বে দেশে। গত বছরের ৮ জানুয়ারি ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে এসেছিল তাপমাত্রা। এবার তা ছাড়িয়ে যেতে পারে।

জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাবে খেয়ালি হয়ে উঠেছে প্রকৃতি। এই অবস্থা বিপদজনক। ইন্টারন্যাশনাল রাইস রিসোর্স ইনস্টিটিউট-ইরি বাংলাদেশের কনসালট্যান্ট ড. এমজি নিয়োগী জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের কারণে এবার আড়াই মাস আগেই শীত এসেছে উত্তরাঞ্চলে। শীতের তীব্রতা বাড়বে বহুগুণ। পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিতেও পারে।

আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান জানান, নভেম্বরের ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। তবে এ মাসেই তাপমাত্রা ক্রমহ্রাসমান হারে কমবে। ইতিমধ্যে কুয়াশা পড়া শুরু হয়েছে। একইসঙ্গে বেড়েছে ঠাণ্ডার অনুভূতি। মৌসুমী বায়ুর প্রভাবেই এমনটি হচ্ছে। ২০১৭ সালের মতো এবার তাপমাত্রা ৪ ডিগ্রির নিচে নেমে আসবে কিনা তা এখনই বলা যাচ্ছে না।

এদিকে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে জানা গেছে, তিললির পর বেশ ভালোভাবে নেমে এসেছে ঠাণ্ডার আমেজ। সকালে-বিকেলে মোটামুটি মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়ছে। অনেক এলাকাতেই রাতে কাঁথার বদলে নামাতে হয়েছে লেপ-কম্বল। ঢাকাতেই ভোর এবং সন্ধ্যায় কুয়াশা পড়তে দেখা গেছে।

গ্রামাঞ্চলে এমন অবস্থা বিরাজ করলেও এখনো তাপমাত্রা ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যেই রয়েছে। কোথাও কোথাও এখনও ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে রয়েছে।

আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, শনিবার সকাল ৬টা থেকে আগের ২৪ ঘণ্টায় দেশে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে মাদারীপুরে, ৩৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে তেঁতুলিয়ায়, ১৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আবহাওয়াবিদ মোহাম্মদ আলী জানান, এবার আবহাওয়ার মতিগতি ভালো নয়। বেশিমাত্রায় খেয়ালী। ষড়ঋতু আর কোন অনুশাসন মেনে চলছে না। এবার আশ্বিন মাসের শেষ সপ্তাহ থেকেই উত্তরাঞ্চলে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কাছাকাছি আসা শুরু করে। ফলে শীত ও কুয়াশাও পড়া শুরু হয়েছে আগে থেকেই। বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ ক্রমাগত কমার কারণে শীত অনুভবের পাশাপাশি আগাম কুয়াশা পড়াও শুরু হয়েছে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.