পরমাণু চুক্তি বাতিলে প্রস্তুত ইরান: খামেনি

345

আর্ন্তজাতিক ডেস্ক: পরমাণু চুক্তি ইস্যুতে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বলেছেন, বিশ্ব শক্তির সঙ্গে সই করা পরমাণু চুক্তি দিয়ে যদি ইরানের স্বার্থ সমুন্নত রাখা না যায় তাহলে তাঁরা এই সমঝোতা পরিত্যাগ করতে প্রস্তুত। খামেনি এমন সময় এ মন্তব্য করলেন যখন যুক্তরাষ্ট্র গত মে মাসে একতরফাভাবে চুক্তি থেকে বের হয়ে গেছে। এবং এই চুক্তি নিয়ে যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। ফলে তাঁর এই মন্তব্যের মধ্য দিয়ে চুক্তি বাঁচাতে ইউরোপের সঙ্গে যে দেনদরবার চলছিল তার ভবিষ্যৎও অনিশ্চিত হয়ে পড়ল।

এদিকে চুক্তি থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর গত মে মাসে ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের ওই নিষেধাজ্ঞা ইরানের অর্থনীতিতে দাঁত বসাতে শুরু করলে এটি প্রত্যাহারের জন্য জাতিসংঘের অপরাধ আদালতের দ্বারস্থ হয় তেহরান।

গতকাল বুধবার আদালতের শুনানিতে ইরানের আইনজীবী বলেন, নিষেধাজ্ঞার কারণে ইরানি জনগণ যে ভোগান্তির মধ্যে পড়েছে তা থেকে তাদের উদ্ধারের সময় পার হয়ে যাচ্ছে।

ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি গতকাল তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্যদের নিয়ে সর্বোচ্চ নেতা খামেনির সঙ্গে দেখা করতে যান। তাঁদের মধ্যে দেশটির বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়। পরে খামেনির সরকারি ওয়েবসাইটে দেওয়া এক বিবৃতিতে খামেনিকে উদ্ধৃত করে জানানো হয়, ‘পরমাণু চুক্তি লক্ষ্য নয়, লক্ষ্য হাসিলের পথ মাত্র। এটি নিয়ে যদি আমাদের জাতীয় স্বার্থ সমুন্নত রাখা না যায় তাহলে আমরা এটি পরিত্যাগ করতেই পারি।’ চুক্তি বাঁচাতে ইউরোপীয়দের সঙ্গে চলমান আলোচনা প্রসঙ্গে খামেনি বলেন, তেহরানকে এর থেকে বের হয়ে আসতে হবে।

রুহানির সঙ্গে বৈঠকে খামেনি আরো বলেন, ‘তেহরানের পরমাণু প্রকল্প নিয়ে নতুন একটি চুক্তি করার জন্য কোনো পর্যায়েই যুক্তরাষ্ট্রের অভদ্র কর্মকর্তাদের সঙ্গে ইরানের বসা ঠিক হবে না।’

এদিকে পরমাণু চুক্তি প্রসঙ্গে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে ইরান। গতকালের শুনানিতে দেশটির পক্ষের আইনজীবী মোহসেন মোহেবি বলেন, ‘ইরান ইসলামী প্রজাতন্ত্রের জন্য সময় ফুরিয়ে আসছে। এ দেশের লাখ লাখ মানুষের জীবন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কারণে চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়েছে। এই চুক্তি বলবৎ থাকলে এবং আরো সম্প্রসারিত হলে ভোগান্তি আরো বাড়বে।’ ইরান এই আদালতের কাছে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে নির্দেশ দেওয়ার আহ্বান জানায়। যদিও ১৯৮০ সাল থেকেই এ দুটি দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই।

তেহরান ও ওয়াশিংটনের মধ্যকার চলমান এ কূটনৈতিক উত্তেজনার মূলে রয়েছে ২০১৫ সালে সই হওয়া পরমাণু চুক্তি। ‘জয়েন্ট কম্প্রিহেনসিভ প্ল্যান অব অ্যাকশন’ (জেসিপিওএ) নামের এ চুক্তির এক পক্ষে সই করে ইরান। আরেক পক্ষে সই করে বিশ্বের ছয় পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া, ফ্রান্স, চীন ও জার্মানি। চুক্তি অনুযায়ী ইরান নিজেদের পরমাণু কর্মসূচি সীমিত করবে। এর বিনিময়ে তাদের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। এর পরের বছর ক্ষমতায় আসেন ট্রাম্প। তাঁর দৃষ্টিতে এই চুক্তি ‘ভয়াবহ রকম একতরফা’ এবং গত মে মাসে এই চুক্তি থেকে বের হয়ে যান তিনি। এরপর নতুন করে ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞাও আরোপ করেছেন। আগামী নভেম্বর থেকে পরবর্তী দফা নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা হবে বলে এরই মধ্যে ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

প্রথম নিষেধাজ্ঞা এরই মধ্যে ইরানের অর্থনীতিতে দাঁত ফোঁটাতে শুরু করেছে। গত এপ্রিল থেকে দেশটির মুদ্রা রিয়ালের দর পতন হয়ে অর্ধেকে ঠেকেছে। বেকারত্ব বেড়েছে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.