বাংলাদেশ সোসাইটির নির্বাচন ২১ অক্টোবর
নিউইায়র্ক: যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশীদের ‘আমব্রেলা সংগঠন’ হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশ সোসাইটি ইনক’র দ্বি-বার্ষিক (২০১৯-২০২০) নির্বাচন আগামী ২১ অক্টোবর রোববার। সোসাইটির ইতিহাসে সর্বোচ্চ সংখ্যক ২৭,৫১০ জন ভোটারের এই নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষভাবে পরিচালনার মাধ্যমে কমিউনিটির দৃষ্টান্ত স্থাপনের অঙ্গীকার করেছে নির্বাচন কমিশন। মঙ্গলবার (৩১ জুলাই) আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে নির্বাচন কমিশন উপরোক্ত অঙ্গীকার করে নির্বাচী তফসিল ঘোষণা করেছে। ঘোষিত তফসিল মোতাবেক মনোনয়নপত্র বিক্রি ১৯ ও ২০ আগষ্ট, মনোনয়নপত্র জমা ২৬ আগষ্ট, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার ৩০ আগষ্ট, মনোনয়নপত্র যাচাই বাছাই শেষে চূড়ান্ত প্রার্থীদের নাম ঘোষণা ৪ সেপ্টেম্বর এবং নির্বাচন ২১ অক্টোবর।এদিকে নির্বাচন কমিশন (ইসি)-এর সাংবাদিক সম্মেলনের আগে সোসাইটির কার্যকরী পরিষদের কর্মকর্তারা ইসির কাছে চুড়ান্ত ভোটার তালিকা আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করেন। খবর ইউএনএ’র।
সিটির এলহার্সস্থ বাংলাদেশ সোসাইটির নিজস্ব ভবনে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্য রাখেন কমিশনের অন্যতম সদস্য মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন। এরপর লিখিত বক্তব্য পাঠের মধ্যদিয়ে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এস এম জামাল ইউ আহমেদ। এসময় ৭ সদস্য বিশিষ্ট নির্বাচন কমিশনের অন্যান্য সদস দের মধ্যে যথাক্রমে এ হাকিম মিয়া, কাওসারুজ্জামান কয়েস, মোহাম্মদ আর সরকার ও খোকন মোশাররফ। কমিশনের অপর সদস্য মোহাম্মদ মহিউদ্দিন দেওয়ান সাংবাদিক সম্মেলনে অনুপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও সোসাইটির সভাপতি কামাল আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমীন সিদ্দিকী সহ কার্যকরী পরিষদের অন্যান্য কর্মকর্তা ও সদস্যবৃন্দ সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এস এম জামাল ইউ আহমেদ বলেন, সোসাইটির বর্তমান কার্যকরী কমিটি গঠনতন্ত্র মোতাবেক নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ৭ সদস্য বিশিষ্ট নির্বাচন কমিশন গঠন করে। নির্বাচন কমিশন ২০১৮ গঠনের পর বাংলাদেশ সোসাইটির সম্মানিত সদস্যদের নির্বাচন সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য অবহিত করাই সাংবাদিক সম্মেলনের মূল লক্ষ্য।
তিনি বলেন, সোসাইটির গঠনতন্ত্রের সাথে সামঞ্জস্য রেখে নির্বাচনের তারিখ ও তফসীল নির্ধারণ করি। সে মোতাবেক বাংলাদেশ সোসাইটি ইনক-এর কার্যকরী কমিটি ২০১৯-২০২০ এর নির্বাচন আগামী ২১ অক্টোবর সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে। মনোনয়ন পত্র বিক্রি করা হবে রোববার ও সোমবার ১৯ ও ২০ আগষ্ট ২০১৮ বিকেল ৭টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত, মনোনয়নপত্র জমা নেয়া হবে রোববার ২৬ আগষ্ট ২০১৮ বিকেল ৫টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার বৃহস্পতিবার ৩০ আগষ্ট ২০১৮ বিকেল ৭টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত, মনোনয়নপত্র যাচাই বাছাই শেষে মঙ্গলবার ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮ বিকেল ৭টা থেকে রাত ৯টায় চূড়ান্ত প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হবে। মনোনয়ন সংক্রান্ত সকল কার্যক্রম বাংলাদেশ সোসাইটির কার্যালয় থেকে নির্বাচন কমিশন পরিচালনা করবেন।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়: বাংলাদেশের বাইরে প্রবাসে সর্বোচ্চ ভোটার সংখ্যা ২৭,৫১০ (সাতাশ হাজার পাঁচশত দশ) জন নিয়ে নির্বাচন হতে যাচ্ছে। প্রার্থীদের সংখ্যা ও এলাকা বিবেচনা করে এবারের নির্বাচনের জন্য আমরা ৫ (পাঁচটি) ভোট কেন্দ্র করার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সম্ভাব্য ভোট কেন্দ্র নিশ্চিত হলে ভোটারদেরকে পরবর্তীতে জানানো হবে। তিনি বলেন, গঠনতন্ত্র মোতাবেক বাংলাদেশ সোসাইটি কর্তৃক তৈরী করা ভোটার তালিকা নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব ওয়েবসাইট এর মাধ্যমে জানানো হবে। যদি কোন ভোটারের নাম, ঠিকানা (পরিবর্তন সহ) ইয়ার অব বার্থ (জন্ম সাল) ভুল থাকে তবে তড়িৎ গতিতে সোসাইটির কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করে আগামী বৃহস্পতিবার ৯ আগষ্ট ২০১৮ এর মধ্যে ঠিক করতে হবে। কার্যকরী কমিটি সংশোধিত তালিকা শুক্রবার ১০ আগষ্ট ২০১৮-এর মধ্যে নির্বাচন কমিশনের নিকট হস্তান্তর করবে। সংশোধিত ভোটার তালিকা হস্তান্তরের পর তা চূড়ান্ত ভোটার তালিকা হিসেবে বিবেচিত হবে। নির্বাচন কমিশন ভোটারের কাছ থেকে সরাসরি কোন সংশোধনী গ্রহণ করবে না।
এস এম জামাল ইউ আহমেদ বলেন, নির্বাচন কমিশন ‘ফ্রি এন্ড ফেয়ার’ নির্বাচন অনুষ্ঠানে বদ্ধ পরিকর। প্রতিটি কেন্দ্রে জাল আইডি প্রতিরোধে দুই স্তরে আইডি পরীক্ষার যন্ত্র ব্যবহার করবে। জাল আইডি ব্যবহারকারীকে নিউইয়র্ক আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে হস্তান্তর করা হবে। যদি সম্ভব হয় তবে নির্বাচন কেন্দ্রগুলোতে ভেতরে ও বাইরে সার্ভিল্যান্স ক্যামেরা বসানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সোসাইটির কার্যকরী কমিটির ১৯টি পদের জন্য মনোনয়ন ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের সরবরাহকৃত তফশীল ও বাইলজ-এ বিস্তারিত দেখতে পাওয়া যাবে।
এস এম জামাল ইউ আহমেদ তার বক্তব্যে সোসাইটির নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও সফল করতে সাংবাদিকদের সহযোগিতা অত্যন্ত জরুরী উল্লেখ করে উপস্থিত সাংবাদিকদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানান এবং সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন। পরে তিনি উপস্থিত সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ভোট হবে মেশিনে। এজন্য লেটেষ্ট আধুনিক নতুন মেশিন খোঁজা হচ্ছে। অপর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ভোট কেন্দ্র ৫টিই থাকবে, তবে ভেনু পরিবর্তন হতে পারে। প্রসঙ্গত ইসি’র সদস্যরা বলেন, নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ভেনু খুঁজতে গিয়ে আমাদেরকে কিছুটা বেগ পেতে হচ্ছে। কেননা, ভেনু খুঁজতে গিয়ে অতীতের নির্বাচনের সময় কিছু অনিয়মের কথাও উঠে আসছে, ফলে অনেক স্কুল ভেনু দিতে চাচ্ছে না। অতীতে নির্বাচনী কেন্দ্রে মারামারির ঘটনাও উঠে আসছে। তবে সমস্যা থাকবে না। অপর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সোসাইটির কাযৃকরী পরিষদের সাথে বৈঠক করেই মনোনয়ন ফি ধার্য্য করা হয়েছে।
নির্বাচন পরিচালনার জন্য কত বাজেট হবে এমন প্রশ্নের উত্তরে জামাল ইউ আহমেদ বলেন, ধারণা করছি প্রায় ২ লাখ ডলারের কাছাকাছি খরচ হবে। ২/১ দিনের মধ্যে ইসি সোসাইটির কার্যকরী পরিষদের কাছে নির্বাচন খরচের বাজেট পেশ করবে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, আতীতের অভিজ্ঞতার আলোকেই ভালো উপহার দেয়ার চেষ্টা করা হবে।
সাংবাদিক সম্মেলনে এক প্রশ্নের উত্তরে সোসাইটির সভাপতি কামাল আহমেদ বলেন, আমাদের জানা মতে প্রায় ১৫০ জনের মতো ডাবল ভোটার নিবন্ধিত হয়েছে এবং সেগুলো মার্ক করা হয়েছে। ভোট দেয়ার সময় একটিই যাতে ভোট হয় তার জন্য নির্দেশিকাও দেয়া হয়েছে।
ভোটার তালিকা হস্তান্তর: ইসি’র সাংবাদিক সম্মেলনের আগে সোসাইটির সভাপতি কামাল আহমেদ প্রধান নির্বাচন কমিশনার এস এম জামাল ইউ আহমেদ কাছে চুড়ান্ত ভোটার তালিকা হস্তান্তর করেন। এর আগে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমীন সিদ্দিকী সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখের এবং সুন্দরভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করতে সবার সহযোগিতা কামনার পাশাপাশি সোসাইটির কার্যকরী পরিষদ সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করবে বলেও আশ্বাস দেন। এসয় সোসাইটির কার্যকরী পরিষদের অন্যান্য কর্মকর্তাদের মধ্যে সিনিয়র সহ সভাপতি আব্দুল রহীম হাওলাদার, সহ সভাপতি আব্দুল খালেক খায়ের, সহ সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ এম কে জামান, কোষাধ্যক্ষ মোহাম্মদ আলী, সাংস্কৃতিক সম্পাদক মনিকা রায়, সাহিত সম্পাদক নাসির উদ্দিন আহমেদ, ক্রীড়া ও আপ্যায়ন সম্পাদক মোহাম্মদ নওশেদ হোসেন, কার্যকরী সদস্য আজাদ বাকির, আবুল কাশেম চৌধুরী ও সারোয়ার খান বাবু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।


