অভিবাসীদের ফেরত না পাঠানোর লিখিত আশ্বাস চায় বাংলাদেশ

236

নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) কার্যকর করা হলে অভিবাসীদের সীমান্তের এপারে পাঠানো হবে না – নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন ভারত সরকারের কাছে এমন নিশ্চয়তার লিখিত আশ্বাস চেয়েছে বাংলাদেশ। বিভিন্ন সূত্রের বরাত দিয়ে ভারতের ইংরেজি গণমাধ্যম দ্য প্রিন্ট এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।

একাধিক সূত্রের বরাত দিয়ে সংবাদ মাধ্যমটি বলছে, ভারতের জাতীয় নাগরিক পঞ্জিকা (এনআরসি) ইস্যুতে নয়াদিল্লির প্রতি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ধারাবাহিক ‘নমনীয়’ অবস্থান ঘিরে সমালোচনার মধ্যে এমন পদেক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

কূটনৈতিক সূত্রের বরাত দিয়ে দ্য প্রিন্টকে বলেছে, আসামে এনআরসি বাস্তবায়নের পর গত অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরেও বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে একই ধরনের একটি দাবি জানানো হয়েছিল। এ সময় ভারত বাংলাদেশকে মৌখিকভাবে আশ্বাস দিয়েছিল যে আসামে এনআরসি-র অধীনে “বিদেশি” শনাক্তকারীদের বাংলাদেশে পাঠানো হবে না। সে সময় লিখিত আশ্বাস দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে নয়াদিল্লি বলে, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী আসামে এনআরসি বাস্তবায়ন করা হয়েছে।

তবে, চলতি মাসে ভারতীয় পার্লামেন্টে ‘সিএএ’ পাস হওয়ার পরে বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বের মধ্যে নতুন উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে যে, ভারত এখন এই আইনের অধীনে অবৈধ বলে বিবেচিত মুসলিম অভিবাসীদের সীমান্ত দিয়ে পুশইন করতে পারে।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, এখন ভারতের ক্ষমতাসীন সরকারের ওপর আদালতের কোনো বাধ্যবাধকতা না থাকায় তাদের লিখিত আশ্বাস দেয়া কঠিন হবে না। তবে তারা বলছেন, এ ধরনের সার্বভৌম নিশ্চয়তা দিয়ে ঢাকাকে কোনো আশ্বাস ভারত দিয়েছে বলে মনে হচ্ছে না।

নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনে মাধ্যমে বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান থেকে ভারতে যাওয়া ৬টি অমুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষদের দেশটির নাগরিকত্ব প্রদানের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এই আইন পাসের পর ভারতজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয় এই আশঙ্কায় যে, সিএএর সাথে প্রস্তাবিত এনআরসি মুসলমানদের লক্ষ্যবস্তু হতে পারে। সরকার বলেছে যে, এনআরসি নিয়ে “কোন আলোচনা” হয়নি।

অভ্যন্তরীণ বিষয়
বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তরক্ষী বাহিনী ডিজি পর্যায়ের বৈঠকে অংশ নিতে গত রবিবার বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিবি) প্রধান শাফিনুল ইসলাম বিজিবির একটি প্রতিনিধি দলসহ ভারতে যান। সেখানেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে বিজিবির প্রধান বলেন, এনআরসি ভারত সরকারের অভ্যন্তরীণ বিষয়। তবে এ সময় নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।

এদিকে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকলেও নয়াদিল্লির কাছ থেকে দৃঢ় আশ্বাস না পাওয়ার ব্যর্থতার প্রশ্নে বিরোধী কণ্ঠস্বরকে শান্ত করা নিয়ে এক কঠিন সময় পার করছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন সরকার।

বাংলাদেশ সরকারের জন্য এই পরিস্থিতি আরও খারাপ হয় যখন গত নভেম্বরে বেঙ্গালুরু থেকে ৬০ অবৈধ বাংলাদেশিকে আটকের পর ঢাকায় পাঠানোর জন্য কলকাতায় নেয়া হয়। চলতি মাসের শুরুর দিকে আসামের গুয়াহাটিতে নাগরিকত্ব আইনবিরোধী বিক্ষোভের সময় বাংলাদেশের জ্যেষ্ঠ এক কূটনীতিকের ওপর হামলা হয়। এছাড়া নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন ঘিরে উত্তেজনা বাড়তে থাকায় বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ. কে. আব্দুল মোমেন এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ভারত সফর বাতিল করেন। সূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন

Leave A Reply

Your email address will not be published.