নদী শাসনে বিলম্বসহ বেশ কয়েকটি কারণে পদ্মা সেতু প্রকল্পের মেয়াদ আরও বাড়ছে

249

নিউজ ডেস্ক: পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল গত বছর নভেম্বরে। পরে তা বাড়িয়ে চলতি বছর জুন পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়। তবে নকশা জটিলতায় সে মেয়াদ আরও ছয় মাস বাড়ানো হয়, যা চলতি বছর ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা। তবে এখনও পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজের অনেকখানি বাকি রয়ে গেছে।

এর পরিপ্রেক্ষিতে আবারও মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের। এবার এক ধাপে সময় বাড়ছে এক বছর ছয় মাস। অর্থাৎ প্রকল্পটি ২০২১ সালের জুনে শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

যদিও বাস্তবে কবে এর কাজ শেষ হবে, তা নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারছে না। গত মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার আভাস দিয়েছেন। তিনি বলেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের কোনো সুনির্দিষ্ট সময় বলা যাবে না। পদ্মা সেতুর পুরো প্রক্রিয়াটাই কারিগরি বিষয়। সেতুর নিচের অংশে ট্রেন, ওপরের অংশে গাড়ি চলবে। এটার প্রযুক্তিই ভিন্ন।

পদ্মা নদীর চরিত্রও এক বড় ব্যাপার বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সবচেয়ে খরস্রোতা নদী। বর্ষার পরই নদীর চরিত্র বদলায়। পলি পড়ে। গতিপথ পরিবর্তিত হয়। এসব কারণে অনেক দিন কাজ বন্ধও রাখতে হয়েছিল। এ কারণে পদ্মা সেতুর কাজ শেষ করার বিষয়টি অনেক কিছুর ওপর নির্ভর করে।

সম্প্রতি প্রকল্পটির মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। এতে প্রকল্পটি বিলম্বিত হওয়ার কয়েকটি কারণ তুলে ধরা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে কনস্ট্রাকশন ড্রয়িং ঠিকাদারকে দেরি করে ইস্যু করা হয়েছে। ২২টি পিলারের নকশায় জটিলতায় যথাসময়ে ঠিকাদারকে পাইলের নকশা ইস্যু করা সম্ভব হয়নি। এতে ঠিকাদারের শিডিউল অনুযায়ী নির্মাণকাজ ব্যাহত হচ্ছে। ফলে মূল সেতুর নির্মাণকাজও দেরি হচ্ছে।

প্রস্তাবে আরও বলা হয়েছে, সেতুর মূল অংশে সাতটি মডিউলে ৪১টি স্টিলের স্প্যান রয়েছে। প্রতিটির দৈর্ঘ্য ১৫০ মিটার। পদ্মায় ভার্টিকাল ঘূর্ণায়ন গভীরতা থাকায় স্প্যান বসানোর কাজের গতিও কমে যাচ্ছে।

অপরদিকে ২০১৫ সালে মাওয়া প্রান্তে বর্ষা মৌসুমে সাড়ে তিন থেকে চার মিটার সেকেন্ড স্রোতে পানি প্রবাহিত হওয়ায় সাড়ে পাঁচ লাখ ঘনমিটারের দুটি গর্তের সৃষ্টি হয়। ফলে ট্রায়াল সেকশনের কাজও দেরি হয়। এ সময় জরুরি ভিত্তিতে নকশা অনুযায়ী ভরাট করতে সময় লাগে। এ কাজে অতিরিক্ত ছয় মাস প্রয়োজন হয়।

নদীশাসন কাজেও বিলম্ব হয়। এর মধ্যে জাজিরা প্রান্তে নদীশাসনের এক হাজার ১০০ মিটার ট্রায়াল সেকশনের কাজ সঠিক সময়ে শেষ হয়নি। এ কারণ নকশা অনুযায়ী ট্রায়াল সেকশনের কাজ সঠিক হয়নি। এই কাজ শেষ করতে দেড় বছর বেশি সময় লাগে। ফলে মূল কাজ নির্মাণে দেরি হচ্ছে।

জানতে চাইলে পদ্মা সেতু প্রকল্পের পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, নকশা জটিলতায় মূল ২২টি পিলারের কারণে মূল অবকাঠামোর কাজ দেরি হয়েছে। এছাড়া নদীশাসন কাজেও বিলম্ব হয়েছে। সব মিলিয়ে সেতু নির্মাণকাজ পিছিয়ে গেছে। এজন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শেষ করতে ২০২১ সালের ২৬ জুন পর্যন্ত সময় চায়। সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে প্রকল্পটির মেয়াদ আরও দেড় বছর বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, প্রকল্পটির মেয়াদ বৃদ্ধির পাশাপাশি ব্যয় বৃদ্ধির সম্ভাবনাও রয়েছে। এক্ষেত্রে পাইলের সংখ্যা বৃদ্ধি, পরামর্শক খাতে ব্যয় বৃদ্ধি এবং সেতুর নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত ৯৯ কম্পোজিট ব্রিগেড খাতে ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। সব মিলিয়ে প্রকল্প ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাবও করবে সেতু বিভাগ।

Leave A Reply

Your email address will not be published.