কলকাতার এই ধনকুবের পুত্র গাড়ি চাপায় মেরেছে ২ বাংলাদেশিকে

284

নিউজ ডেস্ক: মর্মান্তিক দুর্ঘটনার সাক্ষী থাকল রাতের কলকাতা। মুম্বাইয়ের পর এবার এই শহরে ‘হিট অ্যান্ড রান’ মামলায় ফাঁসলেন প্রভাবশালী ব্যক্তি। ২০০২ সালে অভিনেতা সালমান খান এই মামলায় ফেঁসেছিলেন। এখনও তার বিচার চলছে। এবার কলকাতা শহরের বিখ্যাত রেস্তোরাঁ আরসালানের মালিকের ছেলে আরসালান পারভেজের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটল। ২ পথচারীকে পিষে দেওয়ার জন্য গ্রেপ্তার করা হলো তাকে।

কলকাতায় শুক্রবার মধ্যরাতে একটি বেপরোয়া জাগুয়ার প্রথমে মার্সিডিজ ও পরে পুলিশ কিয়স্কে ধাক্কা মারে। এরপর সেটি পিষে দেয় দুই বাংলাদেশি নাগরিককে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁদের। গাড়ি ছেড়ে পালালেও ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পরেই পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে ঘাতক গাড়ির চালক আরসালান পারভেজকে। পারভেজ কলকাতার বিখ্যাত বিরিয়ানি চেন আরসালানের মালিকের ছেলে। পুলিশ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। 

পুলিশ জানিয়েছে, ২২ বছর বয়সী আরসালান পারভেজ লন্ডনের এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। কয়েকদিনের ছুটিতে তিনি বাড়ি এসেছিলেন। শুক্রবার রাতে গাড়ি নিয়ে বেরিয়েছিলেন তিনি। তারপরেই ওই দুর্ঘটনা ঘটে। 

জানা গেছে, পারভেজকে  গ্রেপ্তার করার পরে তার বিরুদ্ধে ‘মোটর ভেহিক্যালস অ্যাক্ট’র একাধিক ধারায় মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। বাংলাদেশ হাইকমিশনের পক্ষ থেকেও মামলা দায়ের করা হয়েছে।

শুক্রবার রাত ১টা ৫০ নাগাদ ঘটনাটি ঘটে। পুলিশ সূত্রে খবর, বিড়লা তারামণ্ডল থেকে কলামন্দিরের দিকে যাচ্ছিল ঘাতক জাগুয়ারটি। অন্যদিকে তখন পার্ক স্ট্রিট থেকে মিন্টো পার্কের দিকে যাচ্ছিল একটি মার্সিডিজ গাড়ি। লাউডন স্ট্রিট ও শেক্সপিয়ার সরণির সংযোগস্থলে প্রথমে প্রবল গতিতে এসে জাগুয়ারটি ধাক্কা মারে মার্সিডিজে। এই ধাক্কায় মার্সিডিজের চালক ও আরোহী আহত হন। তবে এয়ার ব্যাগ থাকায় বেঁচে যান তাঁরা। দুটি গাড়িরই এয়ার ব্যাগ খুলে যায়। তবে মার্সিডিজে ধাক্কা মেরেই থেমে যায়নি জাগুয়ার। 

পুলিশ জানিয়েছে, জাগুয়ারটির গতি এতই বেশি ছিল যে তারপর পাশের পুলিশ কিয়স্কে ধাক্কা মারে সেটি। ধাক্কার জেরে কিয়স্কটি হেলে যায় পাশে। ভাগ্যক্রমে সেই সময় সেখানে কোনও পুলিশকর্মী ছিলেন না। সেই কিয়স্কের পাশেই বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচতে তিনজন দাঁড়িয়েছিলেন। তাঁদেরও পিষে দেয় জাগুয়ার।

দুর্ঘটনার খবর পেয়ে সেখানে আসেন শেক্সপিয়ার সরণি থানার পুলিশ। তাঁরা তিন পথচারী ও মার্সিডিজের দুই আরোহীকে সঙ্গে সঙ্গে নিয়ে যান এসএসকেএম হাসপাতালে। সেখানে ডাক্তাররা জানিয়ে দেন, দুর্ঘটনায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে। তৃতীয় ব্যক্তি ও মার্সিডিজের দুই ব্যক্তি এসএসকেএম-হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। 

পুলিশ জানিয়েছে, নিহত দুজনের নাম কাজি মহম্মদ মইনুল আলম ( ৩৬ ) ও ফারহানা ইসলাম তানিয়া ( ২৮ )। দুজনেই বাংলাদেশের ঢাকার বাসিন্দা বলে জানা গেছে।

বাংলাদেশের ডেপুটি হাই কমিশনের কর্তা মহম্মদ বসিরুদ্দিন জানান, আমাদের দেশের দুই নাগরিক মারা গেছেন। পরিবারকে খবর দেওয়া হয়েছে। আমরা নিয়ম মেনে পুলিশের সঙ্গে কথা বলে মরদেহ দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করছি। রাতে হোটেলে ফেরার সময় বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচতে কিয়স্কের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন তাঁরা। তখনই এই ঘটনা ঘটে। আমরা অভিযোগ দায়ের করেছি।

দুর্ঘটনার পর পারভেজ পালিয়ে গেলেও আরটিও থেকে গাড়ির মালিকের খোঁজ পায় পুলিশ। 

কলকাতার পুলিশের ডিসি সাউথ মিরাজ খালিদ জানান, গাড়ির মালিকের খোঁজ পাওয়া গিয়েছে। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তারপরেই গ্রেফতার করা হয় আরসালান পারভেজকে।

সূত্র : দ্য ওয়াল, সংবাদ প্রতিদিন 

Leave A Reply

Your email address will not be published.