প্রবাসে বাঙালি সংস্কৃতি জাগ্রত রাখার সংকল্প নিউইয়র্কে বৈশাখবরণে

209

নিউইয়র্ক থেকে: নাচ, গান আর মঙ্গল শোভাযাত্রার আমেজে পান্তা-ইলিশের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে প্রবাসীরা বাংলা নতুন বছরকে বরণ করলো। এ সময় উচ্চারিত হলো নতুন প্রজন্মে বাঙালি সংস্কৃতি বিচ্ছুরণের চলমান প্রয়াস আব্যাহত রাখার সংকল্প। হাজার বছরের ঐতিহ্যমণ্ডিত বাঙালি সংস্কৃতির পরিপূরক পোশাক পরে হাজার-হাজার নারী পুরুষের পদচারণায় জ্যাকসন হাইটস, জ্যামাইকা আর ব্রঙ্কসের পার্কচেষ্টা মুখরিত হয়ে উঠেছিল। চমৎকার আবহাওয়ায় বৈশাখবরণের দিনটিকে অনেকেই ঈদের দিনের মতোই আনন্দ-উল্লাসে ছিলেন। ১৪২৬ এর প্রথম দিনটি রবিবার তথা সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় স্কুল-কলেজগামী ছেলে-মেয়েরাও নবউদ্যমে মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করে।

উত্তর আমেরিকায় বাংলা সংস্কৃতি নতুন প্রজন্মে প্রবাহিত করার পাশাপাশি মূলধারায় বাঙালির সংস্কৃতিকে পরিচিত করতে বহুদিন যাবৎ তৎপর ‘বিপা’র উদ্যোগে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয় জ্যাকসন হাইটসের ডাইভার্সিটি প্লাজা থেকে। নেতৃত্বে ছিলেন ‘বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব পারফর্মিং আর্টস’ তথা বিপা’র কর্মকর্তাগণের সাথে নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কন্সাল জেনারেল সাদিয়া ফয়জুননেসা। বর্ষবরণের গানে গানে এ শোভাযাত্রা ৭৪ স্ট্রিট হয়ে ৩৭ এভিনিউ অতিক্রম হরে ৭৩ স্ট্রিট ধরে পুনরায় ডাইভার্সিটি প্লাজায় মিলিত হয়। এ সময় থমকে দাঁড়িয়েছিল গোটা জ্যাকসন হাইটস। বাংলাদেশিদের উদ্যোগে এত বড় শোভাযাত্রা দেখে ভিনদেশীরাও কৌতুহল দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন।

মঙ্গল শোভাযাত্রার কয়েক ঘণ্টা পর পর্যন্ত এর রেশ চলতে থাকে পুরো এলাকায়। সন্ধ্যায় সাড়ে ৬টায় বর্ষবরণের আরেকটি অনুষ্ঠান উপলক্ষে বাঙালিদের ঢল নামে জ্যাকসন হাইটসেরই বেলজিনো পার্টি হলে। নিউইয়র্কে বাংলা নতুন বছরকে ঘটা করে বরণে সর্বপ্রথম ১৯৯৪ সালে ‘এসো হে বৈশাখ’ কর্মসূচির আয়োজন করে ড্রামা সার্কল। সেই ধারায় এবার ২৫তম বৈশাখবরণ উপলক্ষে ড্রামা সার্কলের এ সুপরিসর পার্টি হলে স্থান সংকুলান না হওয়ায় শত শত নারী-পুরুষকে বাইরে অপেক্ষা করতে হয়। বাইরে দাঁড়িয়েই সকলে আড্ডা দেন বৈশাখের আমেজেই। রাত ৮টায় পান্তা-ইলিশসহ বাঙালি খাবার পরিবেশনের কার্যক্রম শুরু হলে পুরো এলাকায় অভাবনীয় এক দৃশ্যের অবতারণা হয়। হোস্ট সংগঠনের সভাপতি আবির আলমগীর, সাবেক সভাপতি নার্গিস আহমেদসহ কর্মকর্তারা দলমত-নির্বিশেষে প্রবাসীদের স্বাগত জানান এবং খাবার গ্রহণের পরই বিশিষ্ট শিল্পীদের অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেন। এর আগে আসছে লেবার ডে উইকেন্ডে ড্রামা সার্কলের ব্যবস্থাপনায় ফোবানা কনভেনশনের সার্বিক প্রস্তুতি এবং এমন একটি মহাযজ্ঞের নেপথ্য কর্মীদের পরিচয় করিয়ে দেন বিপুল করতালির মধ্যে। ৩০ আগস্ট শুরু ফোবানার ৩৩তম কনভেনশন চলবে ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নিউইয়র্ক সিটি সংলগ্ন লং আইল্যান্ডে নাসাউ কলসিয়ামে। ১০ সহস্রাধিক প্রবাসীর সমাগম ঘটানোর পাশাপাশি বাংলাদেশ, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডাসহ বহির্বিশ্বে মেধাবী প্রবাসীদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে এই কনভেনশনে। যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় জন্মগ্রহণকারি বাঙালি প্রজন্মের জন্যও এবার বেশ কয়টি ইভেন্ট রয়েছে বলে জানান হোস্ট কমিটির সদস্য-সচিব আবির আলমগীর। হোস্ট কমিটির কনভেনর নার্গিস আহমেদ এ সময় ফোবানার সম্মেলনের বিভিন্ন কমিটির শতাধিক সদস্য-কর্মকর্তাসহ নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান মীর চৌধুরী এবং নির্বাহী সচিব জাকারিয়া চৌধুরীকেও লাল গোলাপ শুভেচ্ছা জানান। 

উল্লেখ্য, নাসাউ কলসিয়ামের মত বিপুল ব্যয়ের অডিটরিয়ামে দৈনিক এক লাখ ২০ হাজার ডলার করে ভাড়া। বিপুল এই অর্থ সংকুলানের জন্য ১০ প্রবাসী প্রাথমিকভাবে ১০ হাজার ডলার করে অনুদান দিয়েছেন। এদেরকেও এ সময় পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়। ফোবানা কনভেনশনের প্রতিদিনের টিকিটের মূল্য ধার্য করা হয়েছে ৩০ ডলার করে। 

এদিকে, ড্রামা সার্কলের বৈশাখ বরণের এই সমাবেশে মূলধারায় কর্মরত প্রবাসীরাও ছিলেন। ভার্জিনিয়া, নিউজার্সি, পেনসিলভেনিয়া, কানেকটিকাট, বস্টন থেকেও এসেছিলেন অনেকে। 

এদিন ভোরে ছায়ানটের আদলে সকাল ৭টা থেকে জ্যামাইকার সুস্যান এন্থনী স্কুল মিলনায়তনে ‘আনন্দধ্বনি’র বর্ষবরণের বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান হয়েছে। এরপর একই এলাকায় পাবলিক স্কুল-৯৫ এর মিলনায়তনে হাজারো প্রবাসীর প্রাণোচ্ছ্বল উপস্থিতিতে পান্তা-ইলিশের পর আলোচনা সভা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেন মূলধারার রাজনীতিকসহ বিশিষ্টজনেরা। এ আয়োজনে ছিল ‘নিউ আমেরিকান উইমেন ফোরাম অব নিউইয়র্ক’, ‘নিউ আমেরিকান ডেমক্র্যাটিক ক্লাব’ এবং ‘নিউ আমেরিকান ইয়ুথ ফোরাম’। মার্কিন রাজনীতিতে বাংলাদেশিদের উত্থানের পথিকৃত মোর্শেদ আলমের সার্বিক পরিচালনায় এ অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন কংগ্রেসওম্যান গ্রেস মেং এবং উদ্বোধন করেন জর্জিয়া অঙ্গরাজ্য সিনেটর শেখ রহমান।  

Leave A Reply

Your email address will not be published.