জাতীয় পার্টির পরবর্তী চেয়ারম্যান সাদ এরশাদ!

240

ঢাকা: তার অবর্তমানে দলীয় প্রধানের দায়িত্ব কে পালন করবেন এ প্রশ্নে আবারও সিদ্ধান্ত বদল করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হসেইন মুহম্মদ এরশাদ।

গত ৮ ডিসেম্বর তিনি যে ‘সাংগঠনিক নিদের্শনা’ জারি করেছিলেন, তাতে বলেছিলেন তার অবর্তমানে চেয়ারম্যানের সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করবে এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার। শুক্রবার সিদ্ধান্ত বদলে জানান, তার অবর্তমানে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করবেন জিএম কাদের।

গত ১ জানুয়ারি সিদ্ধান্ত বদল করে এরশাদ জানান, তার অবর্তমানে তাঁর ছোট ভাই গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদেরই হবেন দলটির চেয়ারম্যান। এক চিঠিতে দলের উত্তরসূরির নাম ঘোষণা করেন তিনি।

চিঠিতে এরশাদ বলেছিলেন, ‘আমি জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হিসেবে পার্টির সর্বস্তরের নেতাকর্মী-সমর্থকদের জ্ঞাতার্থে জানিয়ে রাখছি যে, আমার অবর্তমানে পার্টির বর্তমান কো-চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। আশা করি, পার্টির জাতীয় কাউন্সিল আমার মতো তাঁকেও চেয়ারম্যান নির্বাচিত করে পার্টির সার্বিক দায়িত্ব তাঁকে অর্পণ করবে।

এর আগে ছোট ভাই জিএম কাদেরকে তিনি পার্টির কো-চেয়ারম্যান ঘোষণা করেছিলেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ছোট ভাইকে সংসদীয় দলের উপনেতাও করেন।

কিন্তু হঠাৎ সবকিছু থেকে জিএম কাদেরকে সরিয়ে নিয়েছেন এরশাদ। জাতীয় পার্টির কো–চেয়ারম্যানের পদ থেকে অব্যাহতির একদিন পর গতকাল শনিবার (২৩ মার্চ) সংসদে বিরোধী দলীয় উপনেতার পদ থেকে অপসারণ করেন ছোট ভাই কদেরকে। তার স্থলে বিরোধী দলীয় উপনেতা হিসেবে দায়িত্ব দিয়েছেন জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান বেগম রওশন এরশাদকে।

অনেকে ভেবেছিলেন এরশাদের অবর্তমানে জিএম কাদেরই হবেন জাপার কর্ণধার। ১৮ জানুয়ারি তেমন ঘোষণাই দিয়েছিলেন এরশাদ। কিন্তু এরশাদের নতুন অবস্থানের কারণে জাপার পরবর্তী কর্ণধার কে হবেন সেটা নিয়ে চলছে গুঞ্জন। এরশাদের গুড লিস্টে কে কে আছেন- তা নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ।

সাবেক রাষ্ট্রপতির সাথে রাহগির আল মাহি এরশাদ

কয়েক বছর ধরে রওশন ও কাদেরের মধ্যে রশি টানাটানি চলছে। কিন্তু বয়সগত কারণে রওশনও এখন খানিকটা ব্যাকফুটে। তাহলে কে? এই প্রশ্নের জবাবে রওশনের ছেলে রাহগির আল মাহি এরশাদ সাদের নাম শোনা যাচ্ছে। আবার ভাতিজা (মামাতো ভাইয়ের ছেলে) একান্ত ব্যক্তিগত সহকারি ও পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য মেজর (অব.) খালেদ আক্তারও গোপন তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অনেকের দাবি।

তবে কয়েকদিনের ঘটনা প্রবাহের পেছনে সাদের আচরণকে সন্দেহের চোখে দেখছেন অনেকে। সাদ অনেকদিন ধরেই এরশাদকে এড়িয়ে চলতেন। মালয়েশিয়া প্রবাসী সাদ দেশে আসলেও মায়ের (রওশন) বাসাতেই থাকতেন। এরশাদের সাথে দুই একবার দেখা করতে এলেও বেশিক্ষণ থাকতেন না। সেই সাদ কয়েকদিন ধরে এরশাদের বাসায় নিয়মিত আসা-যাওয়া করছেন। প্রেসিডেন্ট পার্কের (এরশাদের বাসা) স্টাফরা বার্তা২৪.কমকে এসব তথ্য জানিয়ে বলেন, জিএম কাদেরের অব্যহতি দেওয়ার তিন ঘণ্টা আগে থেকে বাসায় ছিলেন সাদ। এদিন কাছাকাছি সময়ে প্রেসিডেন্ট পার্কে হাজির হন সাবেক মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, সাদ ও খালেদ আক্তার।

জানা গেছে, খালেদ আক্তারকে তেমন পছন্দ করতেন না সাদ। সামনাসামনি দেখা হলেও খুব কমই আলাপ হতো। কিন্তু সেই সাদ শুক্রবার রাতে (জিএম কাদেরকে সরানোর আগে) এরশাদের বাসা থেকে বের হয়ে নিজের গাড়িতে না উঠে খালেদ আক্তারের করোলা প্রিমিও গাড়িতে চেপে রওয়ানা দেন। আর সাদের প্রাডো (মা রওশনের ব্যবহারকৃত ঢাকা মেট্রো-ঘ- ১১-১৬৯৪) গাড়িটি পেছনে পেছনে বনানীর দিকে ছুটে যায়। কিছুক্ষণ পরে কম্পিউটার অপারেটর রিপনকে নিয়ে হাজির হন মেজর খালেদ। শনিবার সকালেও প্রেসিডেন্ট পার্কে হাজির হন সাদ। দুপুরের পর বের হন, তার কিছুক্ষণ পর বিরোধীদলীয় উপনেতার পদ থেকেও সরানো হয় সজ্জন রাজনীতিবীদ কাদেরকে। কাদেরকে সরানোর পেছনে সাদ, হাওলাদার ও খালেদের হাত থাকতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। আর পেছন থেকে কলকাঠি নাড়ছেন রওশন এরশাদ নিজে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.