নিউইয়র্কে নানা আয়োজনে বিজয় দিবস উদযাপন

329


নিউইয়র্ক:নিউইয়র্কসহ যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকায় ৪৮তম বিজয় দিবস উদযাপিত হয়েছে।  বিজয়ের ৪৭ বছর স্মরণে ৪৭ কবি বিজয়ের কবিতা পাঠ করেন। যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণকারি শিশু-কিশোরেরা বাংলাদেশের প্রকৃতি সম্পর্কিত চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। বিজয় দিবস উপলক্ষে নিউইয়র্কে এসব কর্মসূচির আয়োজন করে যৌথভাবে যুক্তরাষ্ট্র সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম ও মুক্তধারা ফাউন্ডেশন।

১৬ ডিসেম্বর দুপুরে বৃষ্টির মধ্যেই জয়-বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু স্লোগানে র‌্যালির মধ্য দিয়ে জ্যাকসন হাইটসের পাবলিক স্কুল-৬৯ এর মিলনায়তনের এ অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধারা একাত্তরের স্মৃতিচারণ করেন। সেখানে স্থাপিত ‘জাতীয় স্মৃতিসৌধে’ শ্রদ্ধাঞ্জলি প্রদর্শন করে সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম ছাড়াও মুক্তধারা ফাউন্ডেশন, নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগ, বহ্নিশিখা সঙ্গীত বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী ও কর্মকর্তারা। 

বাংলাদেশ প্রতিদিনের উত্তর আমেরিকা সংস্করণের নির্বাহী সম্পাদক ও মুক্তিযোদ্ধা লাবলু আনসারের সঞ্চালনায় কণ্ঠযোদ্ধা রথীন্দ্রনাথ রায় এবং সহযোদ্ধা নাসিমুৃন্নাহার নিনি একাত্তরের স্মৃতিচারণ করেন।

এছাড়াও ১৯৪৭ সালে পাক-ভারতে বিভক্তি এবং একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাীনতার প্রেক্ষাপট নিয়ে গবেষণারত একটি সংস্থার প্রধান ও স্টেট ইউনিভার্সিটি অব নিউইয়র্কের রাজনীতি ও অর্থনীতি বিষয়ক অধ্যাপক ড. সাচি জি দস্তিদারকে বিশেষভাবে সম্মান জানানো হয়। এ পর্বের সঞ্চালনা করেন যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের সেক্রেটারি আব্দুল কাদের মিয়া।

সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের সভাপতি  মুক্তিযোদ্ধা রাশেদ আহমেদ, সেক্রেটারি রেজাউল বারিসহ উপস্থিত সকল মুক্তিযোদ্ধাকে উত্তরীয় পরিয়ে  বিশেষ সম্মান জানানো হয়।

বিজয় দিবসের এ অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন মুক্তিযোদ্ধা ও প্রখ্যাত সমাজ-সংগঠক ড. জিয়াউদ্দিন আহমেদ। এ সময় আরও বক্তব্য দেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নিউইয়র্ক চ্যাপ্টারের সভাপতি ফাহিম রেজা নূর।

বিজয়ের কবিতা পাঠ ও আবৃত্তিকারী ৪৭ জনের মধ্যে অন্যতম ছিলেন ফকির ইলিয়াস, শামস আল মোমিন, শামসাদ হুসাম, ফারহানা তুলি ইলিয়াস, শাহীন ইবনে দিলওয়ার, মনিজা রহমান, আহমেদ হোসেন বাবু, ছন্দা বিন্তে সুলতান, আনোয়ার হোসেন সেলিম, শিবলী সাদিক প্রমুখ। সঞ্চালনায় ছিলেন শিরীন বকুল।

এ অনুষ্ঠানে ‘স্মৃতিতে সঙ্গীতে মুক্তিযুদ্ধ’ শীর্ষক হৃদয়গ্রাহী একটি পর্বের সঞ্চালনায় ছিলেন জীবন চৌধুরী। সমাপনী বক্তব্য দেন সমগ্র অনুষ্ঠানের সমন্বয়কারি শুভ রায়।

৪৮তম বিজয় দিবস উপলক্ষে নিউইয়র্কে বাংলাদেশ মিশন ও কন্স্যুলেট জেনারেলের যৌথ অনুষ্ঠান হয় ১৬ ডিসেম্বর রবিবার সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে। এদিন সকালে জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনার মধ্য দিয়ে দিবসটি উদযাপনের শুভ সূচনা হয়। এসময় মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী শহীদদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।

সন্ধ্যায় আলোচনা অনুষ্ঠানটি যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী মুক্তিযোদ্ধা, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, ব্যবসায়ী, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেনী-পেশার প্রবাসীদের মিলন মেলায় পরিণত হয়। আলোচনা পর্বে উঠে আসে জাতির পিতার অবিসংবাদিত নেতৃত্বে সূদীর্ঘ রাজনৈতিক সংগ্রাম, বাঙালির বিজয় অর্জনের ইতিহাস, মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধকালীন স্মৃতি, দেশের ব্যাপক উন্নয়ন এবং রূপকল্প ২০২১ ও রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বের বিভিন্ন দিক।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন। রাষ্ট্রদূত মাসুদ তার উদ্বোধনী বক্তব্যে স্বাধীনতার মহান স্থপতি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতা এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের ত্রিশ লাখ শহীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। তিনি তার বক্তব্যে মহান স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিকাশ এবং জাতীয় উন্নয়নে বাংলাদেশের অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রা এবং বিজয় দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরেন।

নিউইয়র্কে  বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল সাদিয়া ফয়জুননেসা দেশের উন্নয়নে প্রায় এক কোটি প্রবাসী বাংলাদেশীর অবদানের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, তারা শুধু রেমিটেন্সই প্রেরণ করছেন না, তারা বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের দূত হিসেবে প্রবাসে সগৌরবে বাংলাদেশকে তুলে ধরছেন। 

অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। আলোচনা পর্ব শেষে স্থানীয় সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী ‘বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ পারফর্মিং আটর্স (বিপা) দেশাত্ববোধক ও মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সঙ্গীত, আবৃত্তি ও নৃত্য পরিবেশন করে। সঙ্গীত ও কবিতার সাথে নৃত্যের পরিবেশনা অনুষ্ঠানটিতে ভিন্ন মাত্রা এনে দেয়।

গত বছরের ন্যায় এবারও স্থায়ী মিশনের বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে ‘বিজয় দিবস প্রীতি টেবিল টেনিস টুর্নামেন্ট’ এর আয়োজন করা হয়। টুর্নামেন্টে যৌথভাবে চ্যাম্পিয়ন হন মোকাররাম আহমেদ ও মেজর মো. আলতাফ আলী এবং এককভাবে চ্যাম্পিয়ন হন মো. আসিফ চৌধুরী। আলোচনা অনুষ্ঠান শেষে বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার প্রদান করা হয়।

যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের অনুষ্ঠান হয় ১৬ ডিসেম্বর রাতে পালকি পার্টি সেন্টারে। সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মাহবুবুর রহমান এবং পরিচালনা করেন সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন দেওয়ান। 

Leave A Reply

Your email address will not be published.