যে গ্রামে পুরুষদের প্রবেশ নিষেধ!

215

আর্ন্তজাতিক ডেস্ক: জিনওয়া, একটি গ্রামের নাম। এই গ্রামটা পেরলেই যুদ্ধ বিধ্বস্ত সিরিয়া। পুরুষ দ্বারা নানাভাবে নির্যাতিত নারীরা গড়ে তুলেছেন এই গ্রাম। তাই এই গ্রামে পুরুষের প্রবেশ নিষেধ। পুরুষ শূন্য এই গ্রামে নিশ্চিন্তে জীবনটা কাটাতে পারছেন সেখানকার বাসিন্দারা। আইসিস জঙ্গিদের কালো পতাকা আর মুহূর্মুহু গ্রেনেডের হুঙ্কারে কার্যত জনপদ শূন্য। এর মধ্যেই নিজেদেরকে নিজেরা নিরাপত্তা দিয়ে তৈরি করেছে সুরক্ষিত এই গ্রাম। উত্তর-পূর্ব সিরিয়ার কুর্দিশ এলাকায় এই জিনওয়ার গ্রামে সব বাসিন্দাই মহিলা। খবর দ্য গার্ডিয়ানের। 

জিনওয়ার গ্রামের প্রত্যেক মহিলার জীবনে রয়েছে এক একটি মর্মান্তিক ঘটনা। কেউ আইসিস জঙ্গিদের হাতে দীর্ঘদিন যৌনদাসী হয়ে বর্বরোচিত অত্যাচারের মুখোমুখি হয়েছেন। কারও স্বামীকে খুন করা হয়েছে। কেউ বা জঙ্গি হামলায় সন্তান-স্বামী দুই খুইয়ে একেবারে নিঃস্ব হয়েছেন। কেউবা দিনের পর দিন ধর্ষণ হয়ে সন্তানসম্ভবা হয়েছিলেন। জীবনের ঘটনা যাই হোক না কেন পুরুষতান্ত্রিক সমাজে এক সরলরেখায় তাঁরা যে অত্যাচারিত এবং অবহেলিত, আজ নির্দ্বিধায় বলছেন ওই গ্রামের মহিলারা। সেখানকার বাসিন্দা ২৮ বছর বয়সী জ়য়নব গাবারী বলেন, ‘আমাদের জীবনে কোনও পুরুষের প্রয়োজন নেই। আমরা বেশ ভাল আছি। যে সব মহিলারা নিজের পায়ে দাঁড়াতে চান, তাঁদের জন্য এটা আদর্শ জায়গা।’ জ়য়নবের মতো এখানকার সব মহিলারা এই ভাবনাই বিশ্বাস করে।

জিনওয়ার গ্রামে ঢোকার পথে সামনের ফটকে বন্দুক হাতে দাঁড়িয়ে থাকে বেশ কয়েকজন মহিলা। তারা আইসিসদের হামলা রুখতে অতন্দ্র প্রহরীর মতো কড়া পাহারা দিচ্ছেন। কৃষিকাজ থেকে স্কুলে পড়ানো সব কাজে পারদর্শী এরা। স্থানীয় মহিলা এবং আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সাহায্যে তৈরি করা হয়েছে এই গ্রাম।

গ্রামের বাড়িগুলোর দেওয়ালে দেওয়ালে আঁকা আছে নারীদের বীরত্বের নানা কাহিনি। শরণার্থী হয়ে না পালিয়ে আইসিস জঙ্গিদের মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছেন তাঁরা।

স্বামী হারিয়ে বছর আটত্রিশের আমিরা মহম্মদ বলেন, নারী ছাড়া স্বাধীনতা পাওয়া যায় না। যত দিন না নারীরা শিক্ষিত হচ্ছেন, স্বনির্ভর হচ্ছেন এই সমাজও কখনও স্বাধীন হতে পারে না।

তিনি আরও বলেন, আমরা নিজেরাই কৃষিকাজ করি। ফসল ফলাই। সেই ফসল রফতানিও করি। আবার সন্তান পালনও করি। পুরুষবিহীন এই ছোট্ট গ্রামই এখন ‘শান্তির রাজধানী’ তৈরি হয়েছে বাশার-অল আসাদের যুদ্ধ বিধ্বস্ত সিরিয়া

Leave A Reply

Your email address will not be published.