হেভিওয়েটরা বাদ পড়ছেন যে কারণে

279

ঢাকা: হেভিওয়েটরা বাদ পড়ছেন- আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী সদস্য একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন পাবেন না বলে ইঙ্গিত মিলেছে। আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানিয়েছে, নিজ এলাকায় জনপ্রিয়তা না থাকা এর অন্যতম একটি কারণ তো বটেই তবে সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত রাখার অভিপ্রায় থেকেও কয়েকজন হেভিওয়েট নেতাকে মনোনয়ন না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

দলকে শক্তিশালী করার স্বার্থে দল ও সরকার আলাদা করার চিন্তাভাবনা সর্বপ্রথম করেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন দল ও সরকার আলাদা হবে, দলের কেন্দ্রীয় কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা ব্যক্তিরা মন্ত্রী, এমপি হবে না। যাঁরা আওয়ামী লীগে থাকবেন তাঁরা শুধু দলের জন্য কাজ করবে এবং পূর্ণকালীন রাজনীতিই করবেন এমনটাই ছিল তাঁর ইচ্ছা। তবে মন্ত্রী-এমপি না হওয়া দলের প্রতি নিষ্ঠাবান নেতাদের বিশেষ ক্ষমতা দ্বারা সম্মানিত করার চিন্তাভাবনাও করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, দল ও সরকার আলাদা করার বিষয়ে নিজের চিন্তা-দর্শনের উৎকৃষ্ট উদাহরণ স্বাধীনতার প্রায় দেড় দশক আগেই বঙ্গবন্ধু স্থাপন করেছিলেন। ১৯৫৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে জয়ী হয়ে যুক্তফ্রন্ট সরকারের কৃষি ও বন মন্ত্রী হন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এরপর ১৯৫৬ সালে কোয়ালিশন সরকারের মন্ত্রিসভায় শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাওয়ার পর তাঁকে মন্ত্রিত্ব এবং দলের মধ্যে যে কোনো একটিকে বেছে নিতে বলা হয়। জাতির পিতা দলকেই বেছে নিলেন। আওয়ামী লিগকে সুসংগঠিত করার উদ্দেশ্যে ১৯৫৭ সালের ৩০ মে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন তিনি। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদটিকে ধরে রেখে মন্ত্রিত্ব ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেন বঙ্গবন্ধু।

বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথেই এবার হাঁটতে যাচ্ছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির গুরুত্বপূর্ণ সদস্য আর সরকার অর্থ্যাৎ সংসদ সদস্যদের আলাদা করতে চাচ্ছেন তিনি। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগ এখনো মনোনয়ন চূড়ান্ত করেনি। কিন্তু আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীদের কথাবার্তা এবং মনোনয়ন প্রাপ্তদের তালিকার যে আভাস-ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে তাতে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির অন্তত দুইজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনোনয়ন বঞ্চিত হতে যাচ্ছেন। মনোনয়ন বঞ্চিত যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং আব্দুর রহমানের নাম আলোচনায় উঠে এসেছে। এছাড়া সাংগঠনিক সম্পাদকদের মধ্য থেকে বি এম মোজাম্মেল হক এবং বাহাউদ্দিন নাছিমও মনোনয়ন বঞ্চিত হবেন বলে জানা গেছে। এই চারজন ছাড়াও কেন্দ্রীয় কমিটির অনেক মনোনয়ন প্রত্যাশী এবার মনোনয়ন পাবেন না বলে ইঙ্গিত দিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা বলছেন, দলের বেশ কয়েকজন হেভিওয়েট প্রার্থীকে এবার মনোনয়ন না দেওয়ার সিদ্ধান্তের পেছনে সংশ্লিষ্ট এলাকায় তাঁদের নিম্নমুখী জনপ্রিয়তার পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি চিন্তা-দর্শন কাজ করেছে। টানা দুই মেয়াদ সরকারে থাকার ফলে আওয়ামী লীগ দুর্বল হয়ে পড়ছে, দলের মধ্যে রক্ত প্রবাহিত হচ্ছে না এবং নেতৃত্ব বিকশিত হচ্ছে না বলে প্রধানমন্ত্রী মনে করছেন। এসব বিবেচনা থেকেই তিনি সাংগঠনিকভাবে দক্ষ কয়েকজনকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে চান বলে জানিয়েছে আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র।

Leave A Reply

Your email address will not be published.